গ্রাম বিকাশের বিনামূল্যের বীজে সর্বস্বান্ত কৃষক

0
298

মাসুদ পারভেজ রুবেল

মাইক্রো ক্রেডিট এনজিও গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ধানের বীজ জমিতে রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি গ্রামের ৬১ জন কৃষক। গত আমন মৌসুমে টেপাখড়িবাড়ি চরাঞ্চলের ৬১ জন দরিদ্র কৃষকের মাঝে রোপণের জন্য বিঘা প্রতি ১ কেজি ধানের বীজ ও প্রয়োজনীয় সার বিনামূল্যে বিতরণ করেন গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র।  কৃষকদের অভিযোগ, গ্রাম বিকাশ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় নিম্নমানের বীজের কারণে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ কেজি ধান। এ  অবস্থায় খাওয়া তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।এ বিষয়ে বারবার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের গ্রাম বিকাশ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। আগামী দিন কীভাবে চলবে? এই চিন্তায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় চরাঞ্চলের হতদরিদ্র এ কৃষকরা।পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের রাবেয়া বলেন, গ্রাম বিকাশ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হাইব্রিড ব্রি-৫২ জাতের ধানের বীজ একবিঘা জমিতে চাষ করেছিলো আমার স্বামী। কিন্তু ধানের ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ১ মন।ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছি, বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫হাজার টাকা। একহাজার টাকা সারের দোকানে বাকি আছে। ধান হয়েছে মাত্র ৩০ কেজি। এখন আমরা খাব কী, আর ধারদেনা ও দোকানের বাকি পরিশোধ করবো কীভাবে?একই এলাকার আব্দুল আজিজ বলেন, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র থেকে বলেছিলো প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মন ধান হবে। তাদের প্রলোভনে বীজ রোপণ করেছি, ধান হয়েছে বিঘায় ১০থেকে ১৫ কেজি।অথচ গতবার এই জমিতে ধান হয়ছিলো ১৮ মন।বিনামূল্যে বীজ পাওয়া আসমার স্বামী আইজুল বলেন, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রে দেওয়া বীজে রোগবালাই বেশি। বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি।এ বিষয়ে গ্রাম বিকাশের লোকজনকে বারবার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে অভিযোগ করেছি। গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র এখন পাত্তাই দিচ্ছে না। যা ক্ষতি করেছে, তার প্রতিকার চাই।ক্ষতিপূরণ না দিলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক দুরুল হুদা বলেন,তিস্তা নদীর এইপাড়ে(৬ ও ৯ নং ওয়ার্ড) আমরা ৩২ জনকে  ধানের বীজ ও সার দিয়েছিলাম, তাদের উৎপাদন ভালোই হয়েছে। কিন্তু নদীর ওইপাড়ে(পূর্ব খড়িবাড়ি ) যে ৬১ জন কৃষককে ধানের বীজ দিয়েছি তাদের   ফসল হয়নি। কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি।উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো আশ্বাস এখনও পাইনি।নিম্নমানের বীজ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে,তিনি বলেন আমরা পিকেএসএফ এর অর্থায়ণে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করেছি।পিকেএসএফ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্রী-৫২ জাতের বীজ ডিলারের কাছে সংগ্রহ করে কৃষককে দিয়েছি।গ্রাম বিকাশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন ,বিষয়টি আমরা তদন্ত করেছি।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, গ্রাম বিকাশ কর্তৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে।কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির  বিষয়টি নিরুপন করে সহায়তা প্রদানের জন্য তাদেরকে বলেছি।ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ঘটনাটি আমার জানা ছিল না।তাছাড়া এনজিও কোন কিছু দিয়ে থাকলে আমাদের কি করার আছে। গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।

আতারা // এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here