গজারিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী তথ্য গোপন করে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী 

0
678

প্রতিনিধি, গজারিয়া :
পঞ্চম ধাপে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে আগামী ৫ জানুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়ন যাচাই -বাছাইয়ের শেষ দিনে গত ১২ই ডিসেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন গজারিয়া উপজেলা নির্বাচন কমিশন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৪ নং ভবেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহিদ মো: লিটন সাজাপ্রাপ্ত আসামী হয়েও তথ্য গোপন করেছেন । এছাড়াও তিনি কর অঞ্চল-২,ঢাকা কর সার্কেল -৪০ এর একজন করদাতা। তাহার টিন নং- ৪৯২৭৫৮২১৩৭৬, তিনি ২০২১-২০২২ কর বর্ষেও তাহার আয়কর রিটার্ণ উক্ত সার্কেলে জমাদান করেনি।তিনি আয়কর অফিস থেকে আয়কর প্রত্যায়নপত্র রিটার্ণ দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং সম্পদ বিবরণীর সত্যায়িত নকল গ্রহণ না করিয়া তাহার মনোনয়নের সাথে আয়কর সংক্রান্ত যে কাগজ দাখিল করিয়াছেন সেগুলোর কোন বৈধতা নেই। ভবেরচর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহিদ মো: লিটন ইউনিয়ন পরিষদ আইন ও নির্বাচনী ম্যানুয়েলের ২৬ ধারা লঙন করিয়াছেন। স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন ও ম্যানুয়েলের বিধি মোতাবেক মো. লিটন ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অন্যদিকে সাহিদ মো: লিটন একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী । এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার পাশাপাশি আদালতে মামলার রায়ের কপিও উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু তালেবকে দেয়া হয়। এরপরও তিনি  লিটুকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এ নিয়ে স্থানীয় ভোটার এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নানান ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আদালতের রায় এবং মামলা সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ৮ম আদালতে সাহিদ মো. লিটন পিতা মো. সালাম হাউজ নং- ৯৪৭/৫(২য় ফ্লোর), মনিপুর, থানা মিরপুর, জেলা ঢাকা। বর্তমানে গ্রাম ভবেরচর, ইউনিয়ন ভবেরচর, থানা গজারিয়া, জেলা মুন্সীগঞ্জ । এর বিরুদ্ধে ১ (এক) বছরের সাজা প্রদান করেছে আদালত । মামলার বাদী অভিজিৎ মল্লিক গ্লোবাল লামিয়া, ফ্লাট নং- ৩-বি, ঘ-১১৮, মধ্যবাড্ডা, থানা বাড্ডা, জেলা ঢাকা। তিনি সাহিদ মো. লিটন এর বিরুদ্ধে এন আই এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় ২১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১শত৬৪ টাকার চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং- সি,আর মামলা নং-১২৩০/২০১৭ এবং মেট্রো দায়রা মামলা নং- ৭৮৮০/২০১৮। উক্ত মামলায় আদালত গত- ১৯/১১/২০১৯ইং তারিখে রায় ঘোষনার দিন ধার্য করেন। সে সময় আসামী লিটন পলাতক ছিলেন। পলাতক আসামী সাহিদ মো. লিটন এর বিরুদ্ধে ১৮৮১ সালের এন, আই এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় অভিযোগটি সন্দেহাতীকভাবে প্রমানিত হওয়ায় আদালত লিটনকে ০১ (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং নালিশী চেকে উল্লেখিত ২১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১শত৬৪ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন। সেই সঙ্গে আসামীকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীর ব্যাংকের অনূকূলে প্রাপ্ত টাকা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। আদলত সুত্রে আরো জানাগেছে, সেই থেকে অদ্যবদি সাজাপ্রাপ্ত আসামী সাহিদ মো. লিটন পলাতক রহিয়াছেন।

স্থানীয়রা জানান,  ভবেরচর ইউনিয়নে নৌকার মনোনিত প্রার্থী মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাহিদ মো: লিটন। একজন সাজা প্রাপ্ত পলাতক আসামী কিভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাও আবার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করে। এ নিয়ে ভোটার এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।  এ ঘটনায় ভবেরচর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মুক্তার হোসেন সাহিদ মো. লিটনের মনোনয়নের বৈধতার বিরুদ্ধে জেলা নির্বাচন কমিশনারের বরাবর আপীল করেন। যাহা নির্বাচনী আপীল মামলা নং- ১১/২০২১।

নৌকার প্রার্থী মো. মুক্তার হোসেন বলেন, সাহিদ মো. লিটন একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। তিনি তথ্য গোপন করে নৌকার বিরুদ্ধে শুধু নির্বাচন নয়, আয়কর রিটার্ণ না করেও আয়কর রিটার্ণ সংক্রান্ত কাগজ দাখিল করেছেন। এ নিয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবুও লিটনের মনোনয়ন বাতিল করেনি নির্বাচন কমিশন। বাধ্য হয়েই আমি জেলা নির্বাচন কমিশনার বরাবর আপীল মামলা করেছি।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহাম্মেদ বলেন, গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মুক্তার হোসেন একটি নির্বাচনী আপীল মামলা দায়ের করেছেন । তার মামলাটি আগামী ১৮/১২-২০২১ইং তারিখ সকাল ১১ টায় শুনানী করা হবে। শুনানী শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here