আর্ন্তাজাতিক ডেস্ক
ভারতের অনেকেই করোনা মহামারি কমে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালকে ঘিরে অনেকটা নিঃশব্দে নববর্ষ উদযাপনের ধরন দেখে বোঝা যায় অবস্থা কতটা বেগতিক। অতি সংক্রামক করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে সারা ভারতজুড়ে।ভারতের ২৩টি রাজ্যে ছড়িয়েছে ওমিক্রন। এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার সাতশ জনে। সবচেয়ে বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে, ৫১০ জন, তার মধ্যে দিল্লিতে ৩৫১ জন। নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৫০ জনের। বলা হচ্ছে, এক লাফে সংক্রমণ বেড়েছে ২২ শতাংশ।২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ভারতে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ মুম্বাইয়ে ওমিক্রন ঠেকাতে বিধিনিষেধ চালু করে প্রশাসন। দেশটির বাণিজ্যিক এই হাবে রাতে কারফিউ জারি করা হয়। সমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয় নাগরিকদের। দিল্লিসহ এখন অর্ধডজনের মতো রাষ্ট্রে চালু রয়েছে নাইট কারফিউ। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের একটি ভয়ানক পরিস্থিতির সাত মাস পার করেছে ভারতের মানুষ। করোনা আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৩ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৫৯০ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ৭৭০ জন।কোনো সন্দেহ নেই যে ভারত আরও একটি করোনার বড় ঢেউয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে, বলছেন বিশ্লেষকরা। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির পল কাট্টুমান, ভারতের কোভিড ট্র্যাকারের একজন, যিনি গত বছর ধারণা দিয়েছিলেন, তিনি বর্তমান
করোনা বৃদ্ধির প্রবণতাকে বর্ণনা করেছেন ‘সুপার-এক্সপোনেনশিয়াল’ হিসেবে।গতবছর ৭ মে ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ চার লাখ ১৪ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে এবার সেটি নাও হতে পারে। তবে কি পরিমাণে পিসিআর টেস্ট হচ্ছে এবং সিস্টেমের উপরও এটি জানা যেতে পারে কি পরিমাণ লোক সংক্রমিত হচ্ছে।গত বছর সংক্রমণে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয় ২৫ শতাংশ কিন্তু ডিসেম্বরে সেটি পৌঁছায় শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে। তবে বর্তমানে শনাক্তের হার ১৭ গুণ বেড়ে গেছে, কলকাতা যেটি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম শহর, সেখানে শনাক্তের হার ১২ শতাংশ। মুম্বাই এবং দিল্লিতে এখন দাপুটে আচরণ ওমিক্রনের।তবে ভারত এখন আগের চেয়ে অনেকটা প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে। গত এপ্রিলে শুরু হয়েছে করোনা টিকার কর্মসূচি। এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেশটির ৪৪ শতাংশ মানুষ টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন। কয়েক লাখ মানুষ সুস্থ হয়েছেন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর।একটি জরিপের তথ্য দেশটির ৬৮ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে মুম্বাইয়ে ৮৭ শতাংশ এবং ৯৭ শতাংশ অক্টোবরে দিল্লিতে, জরিপে উঠে আসে। দিল্লির ৮০ শতাংশ শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির তথ্য পাওয়া গেছে।এদিকে, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতে আজ সোমবার (৩ জানুয়ারি) থেকে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিকাগ্রহণের জন্য ৮ লাখের বেশি তরুণ-তরুণী কোউইন পোর্টালে নিবন্ধন করেছেন এরই মধ্যে। তারা সবাই কোভ্যাক্সিনের টিকা পাবেন। এই অনুমান দক্ষিণ আফ্রিকার মতোই, যেখানে ওমিক্রন প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং যেখানে করোনার প্রকোপ এখন হ্রাস পাচ্ছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে ভারতেও, প্রথম শনাক্তের চেয়ে এখন কমের দিকে যেতে পারে।
আলোকিত প্রতিদিন/৩জানুয়ারি২০২২/মওম