রুবেল পারভেজ:
নীলফামারীর ডিমলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তিন ফুট উঁচু ইটের দেয়াল নির্মাণ করে সবজি চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কমিটির বিরুদ্ধে ।করোনায় বন্ধ থাকার সুযোগে উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চারঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে ।ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কমিটির দাবি, জমির মালিকানা মাদ্রাসার, স্কুলের নয়। সরজমিনে দেখা যায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ইটের প্রাচীরে ঘিরে দখল করে চাষাবাদের জন্য লিজ দিয়েছে মাদ্রাসা কমিটি। কেটে ফেলা হয়েছে বিদ্যালয়ের মাঠে থাকা বড় বড় ১২০টি গাছ।এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে পাঠদান চললেও, মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।প্রাচীর নির্মাণ করে তাঁরকাটা দেওয়ায় স্বাস্থ ঝুকিতে আছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে স্কুলে আসছে না।প্রতিষ্ঠানটির খেলার মাঠের বর্তমান চিত্র দেখে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী-কোমলমতি শিক্ষার্থী অভিভাবকরা। জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ করায় অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে পেঁপে গাছ ও চাষাবাদ করার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ জানালেও, লাভ হয়নি। সালিশে বসেও সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি গড়িয়েছে প্রশাসন পর্যন্ত।জানা যায়, ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ের নামে ৫৫ শতাংশ জমি লিখে দেন আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে বেঁচে নেই।৩১ বছর পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, জমির মালিকানা ।তাদের দাবি ১৯৮৪ সালে ৮০ শতাংশ জমি নিউক্লিয়াস মাদ্রাসার নামে লিখে দিয়েছেন আবুল কাশেম।এর মধ্যে ৩০ শতাংশ জমি স্কুল কর্তৃপক্ষের দখলে ছিল।মাদ্রাসা কমিটির কোষাধ্যক্ষচাপানী ইউনিয়নের চারঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে এসলাম বলেন, মাদ্রাসা কমিটি,এলাকাবাসী চারঘড়ি স্কুল কমিটির সভাপতির সিদ্ধান্তে মাদ্রাসার জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং মাঠে থাকা গাছ বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ইট,সিমেন্ট ক্রয় করে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সময়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে কম আসতেন। এই সুযোগে দুলাল এবং এসলামের নেতৃত্বে বিদ্যালয় মাঠ ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে প্রায় ৩০ শতাংশ জমি দখল করে চাষাবাদের জন্য ঐ এলাকার দুলাল হোসেনকে লিজ দেয় জমিদাতার স্বজনরা মাদ্রাসা কমিটির লোকজন।খবর পেয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে গেলে তাদের দেয়া হয় নানা রকম হুমকি। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও ভূমি অফিস এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান।প্রধান শিক্ষক জামিয়ার রহমান বলেন, দলিল ও রেকর্ড মূলে এই জমি স্কুলের সম্পত্তি। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ হয়। সেখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জমির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
সিদ্ধান্ত হয় আইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা ফয়সালা হবে।কিন্তু স্থানীয় মাতব্বরদের গাঁয়ের জোরে স্কুলের মাঠ দখল করে নেয়।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাঠদানের জন্য একমাত্র ভবনটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, মাঠ থেকে প্রাচীর সরানো হয়নি। শ্রেণীকক্ষ থেকে মাত্র ২৫ ফুট দূরত্বে ৩ফুট উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে তাঁরকাটা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।এ অবস্থায় সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি খোলা হয়।এ বিষয়ে চারঘড়ি স্কুল কমিটির সভাপতি এরশাদ আলী বলেন,এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়ে মাদ্রাসার জমি উদ্ধার করেছে ।আমি এলাকাবাসীর পক্ষে মতামত দিয়েছি।এবিষয়ে জানতে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে বহুবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, একটি মীমাংসিত বিষয়কে জটিল করে তুলেছেন মাদ্রাসা কমিটির । ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন,আমি সদ্য যোগদান করেছি,বিষয়টি আমার জানা নেই।বিদ্যালয়ের জমি কেউ দখল করতে পারে না।খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/৫জানুয়ারি২০২২/মওম