রুবেল ,পারভেজ
ডিমলা উপজেলার খালিশা চা পানি ইউনিয়নের তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোঁখে পড়লো একদল মানুষ তাবু টানছে। তাবুর পাশেই চুলা তৈরি করে রান্নায় ব্যস্ত অনেকেই। ছোট ছোট বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে। তাদের মধ্যেই কয়েকজন বানরের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠেছে। বলছি একদল যাযাবর মানুষের কথা। তাদের দেখতে ভীড় করে আছে অনেক মানুষ।
জানা যায়, ৫০ জনের এই যাযাবর দলটি এসেছে নাটোরের দমদমা থেকে।এখন খোলা আকাশের নীচে তাঁবু গেড়েছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশেই তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে।প্রচন্ড শীত আর হিমেল হাওয়ায় মাটির উপর সামান্য খড় বিছিয়ে পাতলা কাপড়ের ছাউনির ছোট্ট ঝুপড়িতে শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে রাত্রি যাপন করে তারা।যাযাবর মানুষদের পরিচয় তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। নেই জীবিকা অর্জনের জন্য সামাজিক রীতি। সঙ্গে বাড়ি সঙ্গে ঘর, তাদের নাম যাযাবর। যাযাবরদের কোনো ঘর নেই, বাড়ি নেই। সাথে তাঁবু নিয়েই ঘোরে। যেখানেই রাত, সেখানেই কাত। বৃষ্টির পানি বা রোদ এড়িয়ে কোনরকমভাবে রাত্রি যাপন করাই তাদের লক্ষ্য। আধুনিক সভ্যতার কোনো ছোঁয়াই তাদের স্পর্শ করেনি।জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় কখনও খাবারের খোঁজে কখনওবা মাথা গোঁজার ঠাঁই এর জন্য । করোনা মহামারিকে উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে এই যাযাবরেরা ছুটে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । কথা হয় যাযাবর এই দলটির সর্দার আলাউদ্দিনের সাথে তিনি জানান, নিরুপায় হয়েই যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।জীবিকার তাগিদে দুর্গম অঞ্চল, ভাসমান নৌকায়, গহিন অরণ্যে এমনকি মরুভুমির মাঝেও দলবেঁধে থাকি আমরা। বংশপরম্পরায় এই যাযাবর জীবনই আমাদের পরিচয় হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যাযাবর জীবন ছেড়ে শহরের কর্মব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই।আলেয়া নামে একজন জানান , আমাদের জমিজমা বাড়িঘর নেই। নির্দিষ্ট ঠিকানা না থাকায় কেউ সাহায্য সহযোগিতা করে না।পান না সরকারি কোনো অনুদান। সন্তানদের পড়াশোনা করানো তো দুরের কথা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা দুর্বিষহ।ছিন্নমূল, অসহায় ও যাযাবরদের জীবনযাত্রা প্রতিনিয়ত যুদ্ধের মতো।সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব। কিন্তু যাযাবররা নির্দিষ্ট কোন সমাজে আবদ্ধ নয়। ঘুরে বেরায় খেয়ালখুশিমতো। এতেই তারা আনন্দ পায়। তাদের মাঝে কখনোই অসন্তুষ্টির ছাপ চোখে পড়েনা।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ জানুয়ারি২০২২/মওম