আব্দুল সাত্তার
খেলার মাঠে মেলা নয়, মেলার জন্য আলাদা জায়গা চাই বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ১৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার ২০২২ইং এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ মন্তব্য প্রকাশ করেন।তিনি বলেন চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলো বছরের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন মেলা কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠানের নামে দখল করে রাখা হচ্ছে। ফলে নতুন প্রজন্ম ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে চলছে। নান্নু, নোবেল, আকরাম, মাসুম, শহীদ, নাফিস, আফতাব, তামিম, আশীষ, ইকবাল, দীলিপ, সুহাস বড়ুয়ার মত তারকা খেলোয়াড়দের বেড়ে উঠা এই চট্টগ্রামেই। তারা যে মাঠে খেলে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন আজ সে মাঠগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। মাঠের অভাবে খেলার দলগুলোর অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে, সমস্যায় পড়ছেন উঠতি খেলোয়াড়েরা। এছাড়া প্রাতঃকালীন হাঁটা, শরীরচর্চা এবং খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত জায়গা অপরিহার্য হলেও দিনের পর দিন তা শুধুই কমছে। গত কয়েক দশকে নগরীতে জনসংখ্যা বাড়লেও খেলার স্থানগুলো হারিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে আর আগের মতো খেলোয়াড় উঠে আসছে না। আর এরকম একটি অস্থির পরিবেশে বেড়ে উঠছে আমাদের সন্তানেরা। মাঠের অভাবে মানসিক এবং শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের সন্তানদের। এদেরকে একটি সুস্থ এবং সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়া আমাদের সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষার নামে খাঁচাবন্দী কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী নয়, সন্তানদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের শহরের যে মাঠগুলো বর্তমানে অবশিষ্ট আছে সে মাঠগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানদের খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। যেসব স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ শতাধিকের উপরে সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকেই মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব স্কুলের মাঠ রয়েছে সেসব মাঠগুলো খেলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। অত্যধিক হারে মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের জানা বোঝার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ক্ষেত্র বিশেষে রোবটের মতো আচরন করছে আমাদের সন্তানেরা। তাছাড়া নগরীর কোনো জায়গাই এখন আর খালি পড়ে থাকছে না। জায়গাগুলোতে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল ভবন। আর এসব বহুতল ভবনে টিভি, মোবাইল এবং কম্পিউটারই হচ্ছে সন্তানদের নিত্য সঙ্গী। তাই আগামী প্রজন্মকে একটি উন্নত, সুশিক্ষিত, সুস্থ মানসিক পরিবেশে বেড়ে উঠার জন্য খেলার মাঠের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী। এজন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি আরো বলেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার কাছে অনেক খালি জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে এসব খালি জায়গা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার না করে বিভিন্ন অর্থলিপ্সু ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিকট বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। এভাবে তারা চট্টগ্রামকে পাখির খাঁচায় বন্দী করে রাখতে চায়। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেন চট্টগ্রামকে কোনভাবেই পাখির খাঁচা বানানো যাবে না। প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য চট্টগ্রামকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। বিভিন্ন সংস্থার এসব উন্মুক্ত জায়গাগুলো খোলা রাখার নিমিত্তে আইন প্রণয়ন করার জন্যও সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান সুজন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ জানুয়ারি২০২২/মওম