মৃত্যুর পরও লাশকে ধর্ষণ করে ২ খুনি

0
374

নিজেস্ব প্রতিনিধি

খুলনার ফুলতলায় মুসলিমা খাতুন (২০) নামে এক তরুণীর মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের তিনদিন পর গ্রেফতার দুই যুবকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুই যুবকের নাম রিয়াজ খন্দকার ও সোহেল ওরফে ইমন সরদারগত বুধবার সকালে ফুলতলা উপজেলার উত্তরডিহি গ্রামের ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত ওই তরুণীর (২০) মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।আটক রিয়াজ খন্দকার ফুলতলা উপজেলার যোগিনীপাশা গ্রামের মোশাররফ খন্দকারের ছেলে ও মো: সোহেল ওরফে ইমন সরদার একই গ্রামের মিলন সরদারের ছেলে।মাত্র তিনদিন  কথা বলার পর ফোনের মাধ্যমে সরলমতি মুসলিমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করে রিয়াজ খন্দকার ও সোহেল ওরফে ইমন সরদার। হত্যার পর মৃত মুসলিমার লাশের ওপরও তারা পাশবিক নির্যাতন চালায় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের পর ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিহত কিশোরীর হাত-পা দেখে লাশ সনাক্ত করে তার বড় দুই বোন আকলিমা খাতুন ও ফাতেমা খাতুন। পুলিশও তার আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় তার নাম মুসলিমা খাতুন।এ ঘটনার পর শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৬-এর একটি টিম ফরিদপুর থেকে রিয়াজ খন্দকার নামে একজনকে আটক করে। পরে ফুলতলা থেকে আটক করা হয় সাগর সরদার নামে আরেক যুবককে।পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টার দিকে ফুলতলা উপজেলার যোগিনীপাশা গ্রামের একটি নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুম থেকে নিহত মুসলিমার খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়।খণ্ডিত মস্তক উদ্ধারের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬-এর পরিচালক লে: কর্নেল মোসতাক আহমদ বলেন, মস্তকবিহীন বিবস্ত্র তরুণীর লাশ উদ্ধারের খবর জানার পর শুক্রবার সোহেল ও রিয়াজ নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রিয়াজকে ফরিদপুর থেকে ও ফুলতলা থেকে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। নিহত মুসলিমার কাটা মাথার সঙ্গে যে বটি দিয়ে তাকে হত্যা করা হয় সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।তিনি বলেন, আসামি রিয়াজ ও সোহেল লম্পট প্রকৃতির লোক। রিয়াজের চার বিয়ে। চতুর্থ বউ তার ঘরে রয়েছে। তারপরও সে মুসলিমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করে। হত্যার তিনদিন আগে রিয়াজের সাথে মুসলিমার পরিচয় হয়। এরপর তারা একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। সাক্ষাতের সময় রিয়াজ তার সাথে সোহেলকে রাখে।বুধবার রাত ৮টা থেকে ৯টার দিকে মেয়েটিকে ওই বাড়িতে নিয়ে আটকিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। পরে দুই ঘণ্টা ধরে তরুণীকে পাশবিক নির্যাতন করে তারা।তিনি বলেন, মেয়েটি যখন বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে, তখন বার বার কাকুতি জানিয়ে বলে, ‘তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কাউকে বলবো না। আমার বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি বাবার কাছে যাব।’কিন্তু সোহেল ও রিয়াজ নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করে যে, তাকে ছেড়ে দিলে রক্ষা পাওয়া যাবে না, অনেক শাস্তি হবে। মেয়েটিকে তারা বলে ‘তোমাকে ছেড়ে দেব’ এই বলে তাকে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে পেছন দিক থেকে গলা মোচড় দিয়ে চেপে ধরলে মেয়েটি মাটিতে পড়ে যায়। তখন মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে টেনে ধরে রাখে রিয়াজ ও সোহেল।পরে তারা নিহত তরুণীর লাশ কাঁধে নিয়ে ওই বাড়িতে রাখে। এ সময় তারা লাশটি বিবস্ত্র করে ফের পাশবিক নির্যাতন চালায়। এসব কথা আসামিরা অকপটে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।তিনি আরো জানান, এরপর গ্রেফতার দু’জন মনে করে এভাবে রেখে গেলে তারা ধরা পড়ে যাবে। এরপর তারা রিয়াজের বাড়ি এসে বটি নিয়ে মেয়েটির মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং তরুণীর পরনের কাপড় দিয়ে তার মাথা ঢেকে ওই বাড়ির বাথরুমে লুকিয়ে রেখে  চলে যায়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরুণীর হত্যার সাথে ওই দু’জনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।নিহত মুসলিমা খাতুনের বোন আকলিমা বেগম জানান, তারা দুই বোন ও বাবা ইমদাদ গাজী ফুলতলা থানার পাশে ভাড়া থাকতেন। তার বাবা অসুস্থ। ঘটনার দিন বাবাকে নিয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন তিনি। বুধবার রাতে মুসলিমা বাড়ি থেকে বেরুনোর পর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।আকলিমা আরো জানান, আমার বোন খুব নিরীহ ছিল। সে জুট মিলে আট ঘণ্টা ডিউটি করে বাকি সময় বাসায় থাকতো। এরা বিভিন্ন সময়ে আমার বোনকে উত্ত্যক্ত করত। আমি এদের বিচার চাই। যেভাবে এরা আমার নিরীহ বোনকে কষ্ট দিয়ে মেরেছে এদেরও সেইভাবে মৃত্যু চাই।নিহত মুসলিমার পিতা ইমদাদ গাজী ভ্যানচালক। দরিদ্রতার কারণে স্থানীয় দামোদর গ্রামে ভাড়া থেকে তিনি স্থানীয় একটি জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার পারভিটা গ্রামে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৩০ জানুয়ারি২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here