দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নাব্যতা সংকট নিরসনে খনন কাজ শুরু 

0
290

মো. আহসানুল ইসলাম

বর্ষার পানি কমে যাওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ৪ মাস ধরে মিরকাদিম লঞ্চ ঘাটে দোতলা কিংবা বড় ধরনের কোন লঞ্চ ঘাটে ভিড়ছেনা বলে জানিয়েছেন ঘাট ইজারাদার সংশ্লিষ্টরা। এতে করে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে জোয়ার ভাটার আগমনের উপর নির্ভর করে ছোট দু”টি লঞ্চ চলাচল করলেও দিনের বেশিরভাগ সময় ঘাট এলাকা যাত্রী শুন্য অবস্থায় পড়ে থাকে। মিরকাদিম লঞ্চঘাটের অচলবস্থা এবং যাত্রীদের দূর্ভোগ তুলে ধরে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়  দৈনিক আলোকিত প্রতিদিনে। সংবাদ প্রকাশের পর নদীতে নাব্যতা সংকটের বিষয়টি নজরে আসেন বিআইডাব্লিইটিএ কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে মিরকাদিম লঞ্চঘাট ও ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঘাটে লঞ্চ এসে না ভিড়ার কারনে এখন আর সাধারণ যাত্রীরা এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করছেনা। মাঝে মধ্যে দু”একজন যাত্রী আসলেও তারা লঞ্চ না ভিড়ার কারনে ঘাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় ৪ মাস আগে থেকে ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় পলি জমে নাব্যতা সংকট তৈরী হয়েছে। দিনের পর দিন এই নাব্যতা সংকট আরো তীব্র আঁকার ধারন করে। ভরা বর্ষার সময় মিরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে ঢাকাগামী ছোট বড় সব ধরনের লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তো। বর্ষা পরবর্তী সময় শীতের আগে থেকেই নদীতে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়। নদীতে পানির পরিমান কমে যাওয়ার সাথে সাথে এই নৌরু চলাচলকারী যাত্রবাহী লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তে ব্যর্থ হন। জোয়ারের সময় দু”টি ছোট লঞ্চ এখন ঘাটে ভিড়লেও যাত্রীদের নেই কোন আনাগোনা। সারাদিনে ২টি ছোট লঞ্চ সকাল ৯টা সন্ধ্যায় ঘাটে এসে ভিড়ে।  কিন্তু দূর দূরান্তে যাতায়াতের কোন লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারছেনা। দূর’দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদেরকে মাঝ নদী থেকে ট্রলার দিয়ে ঘাটে এনে নামাতে হচ্ছে । বর্তমানে নদী খনন কার্যক্রম শুরু হওয়াতে স্থানীয় যাত্রী এবং স্থানীয়দের মাঝে স্ব:স্থি ফিরে এসেছে।(মিরকাদিম লঞ্চঘাট নাব্যতা সংকটে অচল ) সরেজমিনে গতকাল সোমবার সকালে মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চঘাটে শুনসান নীরবতা। ঘাট থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে, এমনকি কোন লঞ্চ ঘাটেও ভিড়ছেনা। যে ঘাটে ভোর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল ছিলো সেই ঘাটে এখন কোন লোকজন নেই। পল্টুনে নেই মানুষের হাঁকডাক, লঞ্চে মালামালা উঠা নামানো এবং যাত্রী ওঠানামার সেই দৃশ্যটি চোখে পড়েনি। তবে ঘাট এলাকায় নদীর তীরে এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীতে বিআইডাব্লিউটিএর ড্রেজারটি নদীতে নোঙর করে রাখা আছে। নদী খনন করার পর যে মাটি আর বালি উঠানো হবে সেগুলো রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  বিআইডাব্লিউ টি.এ মিরকাদিম বন্দর অফিস সুত্রে জানান, নদী খননের জন্য সরকারি ড্রেজার এসেছে। নদীর তীরে ডাইক ( বাঁধ) নির্মাণ করা হচ্ছে। নদী খনেনর সময় যে মাটি আর বালু উঠবে সেগুলো বাঁধের ভিতরে ফেলা হবে। নদীর তীরে বালু ফেলানোর জায়গাটিতে বাঁধ দেয়া সম্পন্ন হলেই নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হবে।  স্থানীয় মুরুব্বি  শুক্কুর মাহমুদ বলেন,প্রতি বছর নদী খনন করে বালুগুলো নদীর তীরে উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। বর্ষার সময়ে আবারও সেই বালিগুলো নদীতে গিয়ে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি করে। এবছর নদী খননের আগে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডাবিব্লউটিএ। নদী খনের আগেই মাটিগুলো একটি নির্ধারিত জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করছেন। আমরা আশাবাদি এবার নদীটা খনন করলে অনেক বছর নাব্যতা সংকটের কবল থেকে মুক্তি পাবো। তিনি আরো বলেন, প্রায় ৪ মাস ধরে মিরকাদিম লঞ্চঘাটে অচলবস্থা চলছে। শত শত যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নদী খননের কাজটি শেষ হলে মানুষ দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি মিরকাদিম লঞ্চঘাটের দীর্ঘ দিনের অচলবস্থা কাটিয়ে ঘাটটিতে প্রাণ ফিরে আসবে। আবারও ঘাটে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়বে। ভোর সকাল থেকে ঘাটে শোনাযাবে ঘাট শ্রমিকদের হাঁক ডাঁক।  ঘাট সুপারভাইজার আব্দুল কাদির জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় ঘাটে আর এখন যাত্রীরা আসছেনা। বড় লঞ্চে করে দূর’ দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদেরকে ট্রলার দিয়ে ঘাটে নামাতে হচ্ছে। বর্তমানে দ্রুত ঘাট এলাকা থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে ড্রেজিং করে নাব্যতা দূর করতে কাজ শুরু করেছে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। আমরা আশাবাদি খনন কাজ শেষ হলে খুব দ্রুত সময়ে ফিরে আসবে লঞ্চঘাটের পূর্বের সেই  রূপ।  বিআইডাব্লিউটিএর নারায়নগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, নদী খননের কাজ এখন চলমান আছে।  নদীতে খনন করার পর যে মাটি উঠবে সেগুলো একটা নির্ধারিত স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরপর ড্রেজিং করে নদীতে জমে থাকা পলি বাঁধের ভিতর ফেলা হবে। যথা সময়ের মধ্যেই মিরকাদিম লঞ্চঘাটের নৌ চ্যানেলটির  নাব্যতা সংকট দূর করা হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here