সঙ্গীত জগতের অনেক বড় ক্ষতি করে বাপ্পি লাহিড়ী চলে গেলেন না ফেরার দেশে

0
294
নিজেস্ব প্রতিবেদক

১৯৭০-৮০ এর দশকে গোটা বলিউড মেতে উঠেছিল বাপ্পি লাহিড়ীর গানেই। ডিস্কো ডান্সার থেকে শুরু করে শরাবি, চলতে চলতের মতো বিভিন্ন জনপ্রিয় গান গেয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালে বাগি ৩ সিনেমায় তিনি শেষ গান করেছিলেন।জানা গেছে, দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সোমবারই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবারই ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর ফের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মধ্যরাতের কিছু সময় আগে তার মৃত্যুর হয়। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে। এটি নিদ্রা সংক্রান্ত অসুখ।মাত্র ১৯ বছর বয়সে সংগীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি । বলিউডের ‘ডিস্কো বয়’ নামেই পরিচিত বাপ্পি লাহিড়ি। হাসিমুখ, সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার স্বভাবের কারণে সংগীত দুনিয়া থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। বাংলা সিনেমায় গান গাওয়ার পাশাপাশি হিন্দিসহ একাধিক ভাষাতেও গান করেছেন তিনি।১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার মা-বাবা বাঁসুরি লাহিড়ী এবং অপরেশ লাহিড়ীও সংগীতের মানুষ। বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারও তার আত্মীয়। ছোট থেকেই শাস্ত্রীয় সংগীত এবং শ্যামা সংগীতের পরিবেশে বড় হয়েছেন। মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই তবলা বাজানো শেখা শুরু করেন বাপ্পি লাহিড়ী। ১৯ বছর বয়সে তিনি মুম্বাই পাড়ি দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম সংগীত নির্দেশনা করেন। এরপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।ডিস্কো ডান্সার গান হিট হওয়ার পরই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান বাপ্পি লাহিড়ী। মিঠুনের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি একের পর এক বিখ্যাত গান গেয়েছেন। তবে ডিস্কো গানই নয়, চলতে চলতে বা জখমীর মতো মনোমুগ্ধকর গানও গেয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংগীত জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।“হে ভগবান! কী করে হল বুঝতে পারি না। ‘রাম্মা হো’, ‘কোই ইহা নাচে নাচে..’, ওর সুরে গাওয়া কত গান আমার হিট হয়েছে। আমার আর বাপ্পিদার জুটিটা ভেঙে গেল..” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন উষা উত্থুপ।স্মৃতিচারণা করে আরতী মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘তখন তোমার একুশ বছর গানটা গাই ওর (বাপ্পি লাহিড়ীর) সুরে। শিক্ষা, মনোকামনা, প্রতিমা- বাপ্পির সুরে বহু হিন্দি ছবিতে গেয়েছি। খুব ভাল সুর করতেন। ওই সময়ে এরকম একটা হিট গান কম শুনেছি। ঈশ্বরের পরম আশীর্বাদ ছিল বাপ্পির ওপর। সুন্দর ব্যবহার ছিল। কখনও উঁচু গলায় কথা বলেননি।’জনপ্রিয় তবলাশিল্পী বিক্রম ঘোষ বললেন, ‘আমি ভাবতে পারছি না। কাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আর আজ বাপ্পি লাহিড়ী। বাপ্পিদার তো বয়সও হয়নি সেভাবে। খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। উনি অনেক কিছু শিখিয়েছেন।’শিল্পী জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘ভারতবর্ষের সংগীতের মহান তারকাকে চলে যেতে হল। যে মানুষটার মনেপ্রাণে বাঙালি। দেশের খ্যাতনামা ডিস্কো সং-কে কত ভালভাবে প্রেজেন্ট করেছেন। কিন্তু বাঙালিয়ানা কখনও ভুলে যাননি। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বলতেন, জিৎ গানের অন্তরা, ওটার মুখরাটা খুব ভাল হয়েছে, কী করে বানালি। কালকে সন্ধ্যাদি, আর আজ বাপ্পিদা, পিতৃস্থানীয় মানুষ। সঙ্গীতের  অনেক বড় ক্ষতি হল। আমি বাপ্পিদাকে কভি আলবিদা না কহেনা… (কখনও বিদায় বলবো না)’।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here