জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন কুমিল্লার মতিন সৈকত

0
311
আরিফুল ইসলাম দিপু
বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ পদক- ২০২১ প্রদান সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামাল, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো. মনিরুজ্জামান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীসহ কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) মনোনিত হয়েছেন। জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ২২ ক্যারেট মানের দুই তোলা ওজনের স্বর্ণের বাজারমূল্যসহ আরো ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট এবং সনদপত্র প্রদান করা হবে। এ পদক সাধারণত জুন মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদান করেন। পরিবেশ,জলবায়ু, কৃষি-নদী, নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতা এবং গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিবেশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মতিন সৈকত কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা শাহানারা বেগম। বাবা প্রখ্যাত সমাজকর্মী প্রয়াত মোঃ কেরামত আলী। মতিন সৈকত  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা সাহিত্যে বি,এ অনার্স সহ এম এ পাশ করেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৮ সাল থেকে  তিনি অধ্যাপনায় নিযুক্ত। মতিন সৈকত ১৯৮৭ সালে তার নিজ গ্রাম আদমপুর এবং পার্শ্ববর্তী পুটিয়া, বিটমান তিন গ্রামের কিশোর যুবকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন পি,এ,বি ক্লাব। তিনি  ১৯৮৭ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়  সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ  তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ -এর লেখা অভিনন্দন পত্র পেয়ে অনুপ্রাণিত হন। সারাদেশে বোরোধান উৎপাদন করতে মৌসুমব্যাপী সেচের পানির জন্য কৃষককে সেচ প্রকল্পের মালিককে  যখন বিঘাপ্রতি ১০০০থেকে ২০০০ টাকা খরচ দিতে হয়। সেখানে মতিন সৈকত ১৯৯৭ সাল থেকে আদমপুর এবং পুটিয়া ও সিঙ্গুলা তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ১৫০ বিঘা বোরোধানের  জমিতে ধান লাগানো থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত  ২৬ বছর যাবত  মাত্র  দুইশ টাকা বিঘাপ্রতি মৌসুমব্যাপি  সেচের পানি সরবরাহ করে ধান উৎপাদনে সহযোগিতা করে জাতীয় দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন।  মতিন সৈকত প্রত্যেক বছর বোরোধানের  জমিতে ঝাটা-জিংলা পুতে দেন যাতে পাখি বসে পোকা-মাকড় খেয়ে ফসলকে নিরাপদ রাখে। এতে কোন ধরনের কীটনাশক বা বিষ ব্যাবহার করা লাগেনা। বিষ, মাটি, পানি, বাতাস, ফসল ও অর্থ নষ্টের পাশাপাশি  জনস্বাস্থের ক্ষতি করে। তিনি  ফসলের মৌসুমে ঢোল পিটিয়ে  মাইকিং করে এলাকার কৃষকদের কীটনাশক বা বিষের ভয়াবহ ক্ষতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। সেচের পানির  উৎস কালাডুমুর নদ মতিন সৈকতের উদ্যোগে সরকারি অর্থায়নে ১১ কিলোমিটার পূনঃখনন হয়েছে। যার ফলে চারটি উপজেলার পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমিতে ১২,৫০,০০০ মণ বোরোধান উৎপাদনে সহায়ক হবে। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যাবহার এবং সম্প্রসারণের জন্য ২০১০ এবং ২০১৭ সালে মতিন সৈকত-কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক দিয়ে  সন্মানিত করেন।পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্তিগত ক্যাটাগরিতে তিনি  সরকারিভাবে ছয় বার চট্টগ্রাম বিভাগে শীর্ষ স্থান অর্জন করেন। একধিকবার জাতীয় পরিবেশ পদকের জন্য প্যানেলভূক্ত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি টেলিভিশন  তার  কাজের তথ্যচিত্র  প্রচার করে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here