নোয়াখালীর বীরমুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন সড়ক সংস্কারে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ!

0
359

প্রতিনিধি,নোয়াখালী :

নোয়াখালীর বীরমুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন সড়ক সংস্কারে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, ২০২০ সালে যোগাযোগ এবং সেতু মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব বেলায়েত হোসেনের পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিনের নামকরণে নোয়াখালী সড়ক বিভাগ ২টি প্যাকেজে এ সড়কের টেন্ডার আহ্বান করেন।জেলার কোম্পানিগঞ্জ হতে কবিরহাট হয়ে সোনাপুর সড়কের হাতাইল্যা পোল থেকে নরোত্তমপুরের করমবক্স বাজার হয়ে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের পুরাতন ১২ ও নতুন ৬ফুট মিলিয়ে সড়কের সম্পূর্ণ সংস্কারসহ সর্বমোট ১৮ ফুট সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সূত্র জানায়, ২ টি প্যাকেজে এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি টাকা। জানা যায়, দু’গ্রুপের দরপত্রে কাজ পান কুমিল্লার হাসান টেকনো বিল্ডার্স। যার স্বত্বাধিকারী সালেহ বাবুল। আর অপর গ্রুপের কাজ পায় বরিশালের মাঈন উদ্দিন বাশি লিমিটেড। নোয়াখালী সড়ক বিভাগ রাস্তা এবং পোল মিলিয়ে ৮কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করেন গত ৫ নভেম্বর। সড়ক বিভাগ রাস্তার পোল, কালভার্ট মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করেন গত ২৫ এপ্রিল। এক গ্রুপের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৫কোটি টাকা, আর অপর গ্রুপের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ করার কথা ছিল। যে কারণে দু’গ্রুপের ঠিকাদারগণ তড়িগড়ি করে নিম্মমানের উপকরণাদী দিয়ে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে দায়সারা গোছের দ্রুত সড়ক নির্মাণ করে চলছেন। অত্যন্ত নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করায় আসছে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে মাঝারি ও ভারী যানবাহন চলাচল চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে এলাকার সচেতন লোকজন মনে করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, এ সড়কে বেশ কয়েকটি পোলও নির্মাণ করেছে এ ঠিকাদাররা। এসব পোল নিমার্ণকালে ঢালাইয়েও মানহীন রডও ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, মান অনুযায়ী ঠিকাদাররা রড ব্যবহার করেননি। ঢালাইয়ের সময় ঠিকাদারের নির্দেশে শ্রমিকেরা ১ ব্যাগ সিমেন্টের সাথে নিম্মমানের ৭/৮ ফুট বালু ও একই মানের ৫/৬ ফুট পাথর মিশিয়ে পোলের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এলাকাবাসী এ নিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে ঠিকাদারের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের চুপসে দেয় বলেও তারা অভিযোগ করেন।  অনুসন্ধানে জানা যায়, সড়কের বর্ধিত ৬ ফুট স্থলে ৫/৬ ফুট গর্ত করে শুভপুরের বালু ফেলে ফিলিং করার কথা থাকলেও ঠিকাদাররা নামমাত্র গর্ত করে পানি ছাড়াই ভিটি বালু দিয়ে দায় সেরেছে। এছাড়া সড়কের সাব বেইজ ম্যাকাডমে যেখানে ৭০ ফুট কনার সাথে ৩০ ফুট বালু মিশিয়ে নিমার্ণ সম্পন্ন করার কথা, সেখানে ৭০ ফুট বালুর সাথে ৩০ ফুট ইটের নিম্মমানের কনা মিশিয়ে সাব বেইজ ম্যাকাডমের কাজ করছে দেদারছে। ঠিকাদারদের দুর্নীতি এখানেই শেষ নয়, পুরাতন সড়কের ব্ল্যাকটপ সম্পূর্ণরুপে তুলে সরিয়ে ফেলার কথা থাকলেও তা না করে ওই পুরোনো ব্ল্যাকটপের ওপর ৬০% লোকাল বা ভিটি বালুর সাথে ৪০% নিম্মমানের পাথর মিশিয়ে প্রায় ৮/৯ কিলোমিটারের সাব বেইজ ম্যাকাডমের কাজ শেষ করেছে ওই ঠিকাদাররা। জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে এই কাজের পরিদর্শনে রয়েছেন চাটখিল ও বেগমগঞ্জ সড়ক উপবিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন। তার বিরুদ্ধে ফেনী মাইজদীর চারলেন সড়কের সেবার হাট থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম  এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, চৌমুহনী গোলাবাড়িয়া সড়ক নির্মাণেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঠিকাদারগণ বীরমুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন সড়কসহ উল্লেখিত সড়কগুলোতে পুকুরচুরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঠিকাদারদের সাথে ভাগাভাগি করে এই পুকুরচুরির কাজটির আসকারা দিচ্ছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বীরমুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন সড়কের দু’পাশে অন্যত্র হতে মাটি এনে ভরাটের কথা ; কিন্তু ঠিকাদারগণ ও তাদের লোকজন আশপাশের ফসলি জমি ও পুকুর মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভেকু দিয়ে জোরপূর্বক মাটি তুলে সড়কের বর্ধিতাংশ ভরাট করছে বলে এলাকার শতশত মানুষ অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, সড়কের পাশের সরকারি খাল থেকেও মাটি তুলে নিয়েছে ওই ঠিকাদাররা। আর এই জঘন্যতম দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছেন নোয়াখালী সড়ক বিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন। এমন অভিযোগ প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী জনগণের। সড়ক সূত্র জানায়, আবদুল্লাহ আল মামুন মন্ত্রী ও সচিবের আত্নীয় পরিচয় দিয়ে নোয়াখালী সড়ক বিভাগে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, হাসান টেকনো বিল্ডার্সের মালিক সালেহ বাবুল এ প্রকৌশলীকে একটি পাজেরো জীপও উপহার দিয়েছেন। এ গাড়ী নিয়ে তিনি প্রায় সময় ঢাকা  এবং নোয়াখালীতে দাবড়িয়ে বেড়ান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়কের বেশির ভাগ কর্মচারী জানান, সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় এ প্রকৌশলী অফিস না করে ঠিকাদারের উপহার দেয়া গাড়ি নিয়ে ঢাকায় পরিবারের সাথে অবস্থান করেন। এদিকে, রাস্তাঘাটে তার অনুপস্থিতিতে ঠিকাদাররা অত্যন্ত নিম্মমানের উপকরণাদী ব্যবহার করছে দেদারছে। তিনি নিজের সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতি জায়েজ করার জন্য সড়ক বিভাগের কার্যসহকারীকে চলমান কাজের তদারকির দায়িত্ব না দিয়ে তার এক আত্নীয় নিজাম উদ্দিনকে চলমান কাজের তদারকির দায়িত্বে রেখেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মানুযায়ী, পুরাতন সড়কের বাতিলকৃত ব্ল্যাকটপগুলো বেগমগঞ্জ স্টক ইয়ার্ডে জমা রাখার কথা। কিন্তু উপসহকারী প্রকৌশলী মামুন ঠিকাদারের সাথে মোটা অংকের ঘুষ-বাণিজ্যের চুক্তি করে পুরাতন সড়কের বাতিলকৃত ব্ল্যাকটপগুলো মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে সহায়ক উপকরণাদী হিসেবে দিব্যি ব্যবহার করছেন। নোয়াখালী সেবার হাট থেকে চৌমুহনী চারলেন সড়কের ফেনী থেকে পরিত্যক্ত ব্ল্যাকটপ তার সেই আত্নীয় নিজাম উদ্দিনের মাধ্যমে ওই সড়কের ঠিকাদারের কাছেও মোটা অংকে বিক্রয় করেছেন। ঠিকাদার বাতিলকৃত ব্ল্যাকটপ দিয়ে এ সড়কের প্রায় কাজ সম্পন্ন করেছেন। সচেতনমহল দাবি করছেন, নোয়াখালী সড়ক বিভাগের পুকুরচুরি মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন বিভাগের মাধ্যমে তদন্ত করলে দিনের আলোরমত এসব দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এ সড়কগুলোর মহাঅনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ফোনে জানতে চাইলে নোয়াখালীর সাংবাদিক সমাজ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনি রিপোর্ট করে কোন লাভ হবে না। যার নামে এই কামাল উদ্দিন সড়কটি হচ্ছে তার সন্তান সাবেক যোগাযোগ সচিব বেলায়েত হোসেন সাহেব আমার মামা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, এই কামাল উদ্দিন সড়কের বরাদ্ধ আনতে আমার পকেট থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কি কারণে এবং কার স্বার্থে ৭ লাখ টাকা খরচ করলেন জানতে চাইলে বলেন, আমার ডিপার্টমেন্টের স্যারদের নির্দেশে। এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আহাদ উল্যাকে কামাল উদ্দিন সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকগুলো সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। যেখানে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে আমরা যাচ্ছি, চেষ্টা করছি শতভাগ কোয়ালিটি দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করার জন্য। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সড়কটির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে এখনি শক্তহাতে সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবী জানিয়েছেন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০৯ মার্চ, ২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here