মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী,সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন 

0
316

মো. সোহেল মিয়া

কর্মব্যস্ত গাজীপুরে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় নগরবাসীর জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রাত-দিন মশার যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিকে মশার উপদ্রব বাড়লেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জয়দেবপুর, ধীরাশ্রম, বোর্ডবাজার,খাইলকুর, ভোগড়া, কোনাবাড়ী, বাসন, ইসলামপুর, কাশিমপুর, নাওজোর, টঙ্গী, বাঘিয়া, মজলিশপুর, গাছা, কড্ডাসহ নগরের প্রায় সবকটি এলাকায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার পর মশার কারণে কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। ক্ষতিকর হলেও মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করে কিছুটা স্বস্তি নিশ্চিত করছে মানুষ। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তাদের। শীত শেষ হতে না হতেই গাজীপুর মহানগর জুড়ে শুরু হয়েছে মশার উৎপাত। রান্নাঘর থেকে শুরু করে অফিস-আদালত এমনকি বাস, ট্রেনেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পান না নাগরিকরা। মশারি, কয়েল ও ম্যাজিক ব্যাট ব্যবহার করেও কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে নগরবাসির। এর মধ্যে চলতি মাসে মশার উপদ্রব আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আভাস দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নেই পর্যাপ্ত নালা, নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান। যে যেখানে পারছেন সেখানেই বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। মশার উপদ্রব এতোটাই বেড়েছে যে অনেকেই দিনের বেলাতেও ঘরে মশারি টানিয়ে রাখছেন। মহানগরের গাছা থানাধীন জাঝর এলাকার বাসিন্ধা মো. টুটুল শেখ আলোকিত প্রতিদিনকে জানান, সন্ধ্যা নেমে আসলেই শুরু হয় মশার অত্যাচার এক যায়গায় বসে থাকা যায়না, কোন কাজ করা যায়না এ মশার অত্যাচারে, আগে দেখতাম সিটি করপোরেশন থেকে মশার ঔষধ ছিটাতো, বর্তমানে এর কোন বালাই নেই, আর মশার কয়েল জালিয়েও থাকা যায়না কয়েলে প্রচুর গ্যাস এতে শুরু হয় শাস কষ্ট। মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা রুমানা আক্তার জানান, ‘মাগরিবের আজানের পরে তো আর মশারীর মধ্যে যাওয়া যায় না। সাংসারের অনেক কাজ থাকে কিন্তু মশার উপদ্রব যে পরিমাণ তাতে কয়েল জ্বালিয়ে সমাধান হয় না। গত বছর সিটি করপোরেশন থেকে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ব্যবহার করেছে কিন্তু এ বছর এখনো এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’ একই কথা বলেছেন গাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন। তিনি আলোকিত প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, সে সময় মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হয়েছিল। এখন তা ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে মহানগরে কিউলেক্স মশা বাড়ছে। নতুন করে দুর্যোগ এড়াতে হলে মশক নিধন কার্যক্রমে ঢিলেমি করা যাবে না। এ ছাড়া মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গাজীপুর জেলা রির্পোর্টাস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক নাহিদ সরকার আলোকিত প্রতিদিনকে জানান, মশার বংশ বিস্তারের জায়গাগুলোতে ওষুধ প্রয়োগ না করায় এদের প্রকোপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে-বাইরে মশার যন্ত্রণায় টিকা দায় হয়ে পড়েছে। অনেকেই মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে দিনে-রাতে মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করছেন। তবে চিকিৎসকরা বলেন, নিয়মিত মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও হুমকিস্বরূপ। গাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হামিদ খান জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট কারখানাগুলোর দূষিত বর্জ্যপানি আশপাশের খাল-বিল-নদী-নালায় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দূষিত পানিতে ব্যাপক হারে মশা বংশ বিস্তার করছে। সন্ধ্যা হলে বেড়ে যায় মশার প্রকোপ। মশার কারণে কোনো কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। এতে মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে। মশার স্প্রে ও মশার কয়েল ব্যবহার করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিটি করপোরেশনের ব্যয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেড় কোটি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য তিন কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মশা নিধনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কার্যক্রম শুরু হবে।’

আলোকিত প্রতিদিন/ ১০ মার্চ, ২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here