সৌর বিদ্যুতের সেচ প্রকল্প স্থাপন কাজে বাঁধা, চাষাবাদে ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা

0
300

সবুজ সরকার

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে প্রান্তিক কৃষকদের সুলভে সেচ নিশ্চিতে সরকার সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ প্রকল্প শুরু করেছে । তবে বাঁধার মুখে সেই সৌর বিদ্যুত সেচ পাম্প স্থাপন করতে পারছেন না স্ক্রীম চাষী ও সাবেক ইউপি সদস্য নাসরিন কামাল। স্থানীয় ডিজেল চালিত সেচ পাম্প স্থাপনকারী রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সরকারের সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্প স্থাপনে বাঁধা দিচ্ছেন। জানা গেছে, সরকার চলতি সেচ মৌসুমে দেশের ২১ জেলায় দুই হাজার সৌর বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচ পাম্প চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী ও ঘাটাইল উপজেলায় শতাধিক সৌর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস-১)। উপজেলায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত ১১টি সেচ প্রকল্প চালুর কাজ চূড়ান্ত করা হয় উপজেলার জ্যোত আতাউল্যা গ্রামে সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্প স্থাপনে স্থানীয় প্রভাবশালী রঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তি বাঁধা দেয়ায় এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত গত ৮ মার্চ সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্প প্রকল্প চালু করা যায়নি। ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নাসরিন কামাল সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্পের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ৫ লাখ টাকায় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ (পবিস) সৌর প্যাকেজ ক্রয় করেন।সেখানে সৌর বিদ্যুতের সেচ প্রকল্প স্থাপন করা হবে সেখানেই জোরপূর্বকভাবে স্থানীয় রঞ্জু মিয়া ডিজেল চালিত সেচ পাম্প স্থাপন করেছেন। তবে ডিজেল চালিত সেচ পাম্প সড়িয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসন নিদের্শ দিলেও সেটি সরানো হয়নি।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্পের স্ক্রীম চাষী নাসরিন কামাল জানান, সৌর বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুত থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সৌর বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এলাকায় গেলে তাদের বাঁধা দেয়া হয়। এছাড়া সেখানে ডিজেল চালিত নলকূপ স্থাপন করেছে রঞ্জু নামের এক প্রভাবশালী। এসময় পল্লীবিদ্যুতের লোকজনের উপর চড়া হয় রঞ্জু। এতে বাধ্য হয়ে বিদ্যুত অফিসের লোকজন যাবতীয় সরঞ্জাম রেখে ফিরে যায়। এ ঘটনায় উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। এতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তিকে তিন দিনের মধ্যে ডিজেলচালিত সেচপাম্প মাঠ থেকে অপসারন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত ডিজেল চালিত পাম্প সরাননি। এসব অভিযোগের বিষয়ে রঞ্জু মিয়া বলেন, কৃষকদের অবহিত না করেই নাসরিন কামাল সৌর বিদ্যুতের সেচ প্রকল্প এনেছেন। কৃষকরা নাসরিন কামালের অধীন সেচ কার্যক্রমের সেবা গ্রহণ করবে না। এছাড়া আমার বাবার নামে সেচ প্রকল্পের লাইসেন্স রয়েছে। প্রশাসন থেকে আমার ডিজেল চালিত সেচ পাম্প সরানোর জন্য বলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জবাব দেয়া হয়েছে। বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের স্থানীয় উপ-সহকারি প্রকৌশলী রোমান মিয়া জানান, ভূগর্ভস্থ সেচ নীতিমালা ১৯৮৫ মোতাবেক একটি অগভীর নলকূপ থেকে আরেকটির দূরত্ব থাকার কথা ৮২০ ফিট। আর সেই সেচ নীতিমালা মাঠ পর্যায়ে দেখার মূল দায়িত্ব উপজেলা সেচ কমিটির।পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গোপালপুর জোনের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার এম তাহসীন ইলিয়াস জানান, সৌর সেচ প্রকল্পের জন্য উপজেলায় ১২টি স্কীমের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে ১১টি প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু প্রথমেই নাসরীন কামালের কাজ করতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়ে। রঞ্জু নামের ওই গ্রামের এক ব্যক্তি সেচ কমিটির নির্দেশ মানছেন না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম আখতার হোসেন জানান, সুলভে সেচ নিশ্চিতের জন্য সরকার এবং এডিবির অর্থায়নে বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দিয়ে সৌর সেচ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক নারী ক্ষমতায়তনের লক্ষে কিস্তির মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদেরকে এ প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এতে জোত আতাউল্ল্যা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নাসরীন কামাল স্ক্রীম ক্রয় করেছেন। তিনি আরো জানান, সেচ মৌসুম শেষ হলে এসব সেচ প্রকল্পে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ বিশেষ ব্যবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রি করে একজন স্কীম চাষী বছরে সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় করতে পারবেন। কিন্তু প্রারম্ভেই নানা বাঁধা বিপত্তির শিকার হচ্ছে সরকারের এ লাভজনক প্রকল্প। উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ মল্লিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ প্রকল্পে যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে এ জন্য প্রশাসন সজাগ রয়েছে। সৌর সেচ প্রকল্প স্থাপনে বাঁধা দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সেখানে একটি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প সরানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ মার্চ, ২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here