আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি-শেখ রাসেল সেনানিবাস উদ্বোধন কালে : প্রধানমন্ত্রী

0
245
নিজস্ব প্রতিবেদক
 নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গে টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন— ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারে না, পারবে না। আমরা যদি ইচ্ছা করি, অসাধ্য সাধন করতে পারি। সেটা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রমাণ করেছি। আজকে আমরা সেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। তার কাজ প্রায় সম্পন্ন।’ ২৯ মার্চ মঙ্গলবারপদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শরিয়তপুরের জাজিরায় নতুন এই সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে পদ্মাসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমবার সরকার গঠনের পরে জাপানে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানাই এবং তারা রাজি হয়। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং আমি পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি ২০০১ সালে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিশ্বব্যাংক অর্থ বন্ধ করে দেয়, একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে— (পদ্মা সেতু প্রকল্পে) দুর্নীতি হয়েছে। সেটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি এবং তাদের বলি, এটা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু তারা তা পারেনি। তিনি বলেন, কানাডা আদালতের মামলার রায়ে প্রমাণ হয় এতে কোন দুর্নীতি হয়নি ও সম্ভবনাও ছিল না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই, কারও অর্থায়নে নয়, যেহেতু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এর জবাব আমরা দিবো। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থয়ানে করবো।  মানুষের সমর্থন ও সাহস পাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া বন্ধুপ্রতীম দেশও আমাদের সহযোগিতা করেছে।‘পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের জিডিপিতে আরও এক থেকে দুই ভাগ সংযুক্ত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এর ফলে আমরা উন্নয়নে আরও একধাপ এগিয়ে যাবো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি; যার কাজ শিগগিরই সম্পন্ন হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।  শেখ রাসেল সেনানিবাস ভবিষ্যতে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং সেনানিবাসের আশেপাশের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কাজে নিয়োজিত থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর আলোকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ব্রিগেড শেখ রাসেল সেনানিবাসের মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা বিধানে সফলভাবে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তারা দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, যুদ্ধ করবো না। জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি শিখিয়ে গেছেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনও যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়, তাহলে আমরা যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি, প্রতিরোধ করতে পারি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমার দু’ভাই- ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। শেখ কামাল ‘বাংলাদেশ প্রথম যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কোর্সে’ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিল। যুদ্ধাকালীন প্রধান সেনাপতির এডিসি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। শেখ জামাল সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিল। যুদ্ধের পোশাকে সশস্ত্র অবস্থায় তার একটি ছবি ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, ‘ছোট ভাই রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে। মাওয়া এবং জাজিরা সেনানিবাসকে শেখ রাসেল সেনানিবাস হিসেবে নামকরণ করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে শেখ রাসেল সেনানিবাসের সকল অফিসার,  ও  অন্যান্য সেনাসদস্যকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে ভবিষ্যতে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ বিষেশ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৯ মার্চ, ২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here