এম কে নূর আলমঃ
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নবাব ছিলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী (১৮৩৪-১৯০৩)। কুমিল্লা জেলার লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ে এক মুসলিম সন্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন এ মহীয়সী নারী শিক্ষা,সমাজ-সংষ্কার ও মানব সেবাব্রতে যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে বিরল। পেশায় তিনি ছিলেন জমিদার, সমাজকর্মি এবং লেখিকা। অনেকটা নিজের অদম্য ইচ্ছা ও শক্তির কারণে শিক্ষিত হয়ে ওঠেন তিনি বাংলা,আরবি,ফারর্সি ও সংস্কৃত এ চার ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। মহারানী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক ১৮৮৯ সালে ‘নওয়াব’ উপাধি লাভ করেন। একজন নারী হয়েও তিনি সে সময় জমিদারীর মত কঠিন দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করে। ১৮৭৩ সালে তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। নারীদের শিক্ষায় সবসময় উৎসাহিত করতেন। তিনি জমিদারীর আয় থেকে ছাত্রীদের হোস্টেলের সকল খরচ বহন করতেন এবং মাসিক বৃওির ব্যবস্থাও করেন। তিনি লাকসামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজ নামে অবিহিত। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন নগদ ১০,০০০ টাকা প্রদান করেন। তিনি শিক্ষার পাশাপাশি নারী স্বাস্থ্য রক্ষা ও সুচিকিৎসারও ব্যবস্থা করেন। ১৮৯৩ সালে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ফয়জুন্নেসা জাঃ হাসপাতাল, যা বর্তমানে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ফিমেল ওয়ার্ড নামে পরিচিত। পদে পদে রয়েছে এ মহিয়সী নারীর পদচিহ্ন। তিনি ১৪টি প্রাইমারী বিদ্যালয়, অনেকগুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল,এতিমখানা,মসজিদ, চলাচলের রাস্তা-ঘাট করে তিনি মানবতাবাদী এবং সমাজ-সংষ্কারের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি পবিএ মক্কা শরীফে মাদ্রাসা-ই-সওলাতিয়া ও ফোরকানিয়া সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রচুর সহায়তা করতেন।১৮৯৪ সালে পবিত্র হজ্ব পালনকালে তিনি মক্কার হাজ্বিদের জন্য একটি মুসাফিরখানা ও বিশ্রামাগার করে দেন। তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ওয়ারিশদের প্রাপ্য যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিয়ে নিজের জমিদারীটি ওয়াকফ্ করে দেন মানবতার চির কল্যাণে। তাঁর প্রতি রইল অকৃএিম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। ২০০৪ সালে তাঁকে মরণোওর একুশে পদকে ভূষিত করাই যথার্থ নয় এ মহিয়সী নারীর জন্য।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০৬ মে ,২০২২/ মওম