চিতলিয়ার সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার জেরে ব্যাপক লুটপাট, পাল্টাপাল্টি মামলা

0
346
প্রতিনিধি, শরীয়তপুর :
শরীয়তপুরের চিতলিয়া ইউনিয়নে আ.লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি কুদ্দুস বেপারী নিহত হওয়ার জেরে আসামী পক্ষ্যের বাড়িঘরে তিনদিন পর্যন্ত ব্যাপক লুটপাট ও নারী নির্যাতনের ঘটছে। পালং মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি মামলায় শতাধিক লোককে আসামী করা হয়েছে। ফলে উভয় পক্ষের শত শত পুরুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পালং মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের ঘটনায় হারুন হাওলাদারের সমর্থকদের ৬৬ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।অপরদিকে  কয়েকজন জখম করার কারনে সালাম হাওলাদারের সমর্থক ৭৫ জনকে আসামী করে পাল্টা মামলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের থেকে জানা গেছে, লুটতরাজ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিতলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার ও চিতলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি মাস্টার হারুন অর রশিদ হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত রাজনৈতিক দ্বন্দে দুই ভাগে বিভক্ত ইউনিয়ন আ’লীগ। রাজনৈতিক শত্রুতার জের ধরে ৩ মে ঈদের নামাজের পরেই সালাম হাওলাদারের সমর্থক লিটন বেপারী ও সৈয়দ সরদার হারুন হাওলাদারের সমর্থক ঈমাম হোসেনকে মারধর করার কারনে দুই পক্ষের মধ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষ্যের বেশ কয়েকজন লোক আহত হন। এদের মধ্যে সালাম হাওলাদারের সমর্থক ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি কুদ্দুস বেপারী আহত হয়ে শরীয়তপুর সদন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কুদ্দুস বেপারী নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরলে ভয়ে হারুন হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকটি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পরে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই সুযোগে হারুন হাওলাদারের সমর্থকদের বসত বাড়ি থেকে গবাদিপশু, স্বর্ণালঙ্কার, ফ্রিজ, টেলিভিশন, নগদ টাকা, আসবাবপত্র গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার, ঢালাই মেশিন, মিকচার মেশিন, ভাইব্রেটর মেশিন, নছিমন, এমনকি ঘরের ব্যবহৃত থালাবাসন, চাল ডাল লুট করে নিয়ে গেছে সালাম হাওলাদারের সমর্থকরা। প্রায় ৪০-৫০ টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে স্বর্বস্ব লুট করে ট্রাক-পিকআপ ভরে নিয়ে গেছে সালাম হাওলাদারের সমর্থকরা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের বিকেল থেকে শুরু করে ৫ মে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় লুট করে অন্তত কোটি টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তরা। চিতলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মজুমদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন চৌকিদার বলেন, ঈদের নামাজ শেষ হতে না হতেই শুনি ইমাম হোসেন বেপারীকে প্রতিপক্ষ মারপিট করেছে। এরপর রাস্তা এসে দেখি উভয় পক্ষ সংঘর্ষের মুখোমুখি। আমি প্রথমে মারামারি থামানোর চেষ্টা করি। এরপর ব্যর্থ হয়ে থানায় বার বার ফোন করে পুলিশ পাঠানোর অনুরোধ করি। ঈদের নামাজ শেষ করে পুলিশ দেখেন সংঘর্ষ থেমে গেছে। আমি মারামারি থামাতে গিয়েও হত্যা মামলার আসামী হয়েছি। আমার আরো তিন ভাই ও ভাতিজাকে আসামী করা হয়েছে। আমাদের বাড়িতে লুটপাট করে ঘরের সমস্ত জিনিপত্র নিয়ে গেছে। এখনো হুমকি ধামকি দেয়ার কারণে শত শত পুরুষ এলাকা ছেরে পালিয়েছে। জাকির সরদারের স্ত্রী সেফালী জানান, ঈদের দিনের মারামারিকে কেন্দ্র করে আমার স্বর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে সালাম হাওলাদারের লোকজন। তারা ঢাল, ছেন নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুট করেছে। ভয়ে আমি টয়লেটে পালিয়ে ছিলাম। জাহাঙ্গীর হাওলাদারের স্ত্রী রেনু জানান,পুরো বাড়ি ঘেরাও করে জালাল হাওলাদারের ছেলে জয় ঘরের ভেতর ঢুকে আমার গলায় ছেন ধরে বলতাছে ঘরে যা আছে ভালোয় ভালোয় দিয়ে দে অন্যথায় জবাই করে দেব। মনির সরদারের স্ত্রী মারিয়া আক্তার জানান,ফ্রিজ নিয়ে গেছে, আলমারি ভেঙে যা কিছু পাইছে সব কিছু নিয়ে গেছে। আবার বলে গেছে সন্ধ্যার পর পিকআপ নিয়ে এসে বাকি যা আছে তাও নিয়ে যাবে। গণি সরদারের ছেলে আউয়াল, জাহাঙ্গীর সরদার এরা এসে সব নিয়ে গেছে। আতাবর রহমান সরদারের মা ছলেহা(৬০) জানান, আমার ছেলের মুদি দোকান লুট করে নিয়েছে সৈয়দ সরদার, আউয়াল সরদার, আনোয়ার সরদার, বেলায়েত মাদবর, মোশাররফ বেপারী, জালাল বেপারী ছেলে হান্নান। জাকির সরদার (৫০), দেলোয়ার সরদার (৪৫),আনোয়ার সরদার (৩৫),লিয়াকত সরদার (৩০),হানিফ সরদার (৩৫), আক্তার সরদার (৩০),ইমান হোসেন সরদার (২৫), এনামুল সরদার,জাহাঙ্গীর হাওলাদার, দুলাল মৃধা ও আব্দুল হাইর (মেম্বার প্রার্থী ছিলেন) বাড়িঘরসহ প্রায় ১৫/২০টি বাড়িঘর লুট হয়।  ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, খালেক হাওলাদের ছেলে জসিম হাওলাদার, ওয়াসীম হাওলাদার। রাজ্জাক, আবুল,আজিজুল, বায়জিদ হাওলাদার, তাহসিন হাওলাদার, জালাল হাওলাদারের ছেলে জয়, মালেক হাওলাদারের ছেলে মাহাবুব, মাসুদ হাওলাদার, সেলিম হাওলাদারের ছেলে শাওন,আনোয়ার চৌকিদারসহ প্রায় ৫০/৬০ জন লোক এসে হারুন হাওলাদারের সমর্থকদের বাড়িঘর লুট করে গরু বাছুর, স্বর্ণালঙ্কার, ফ্রিজ, নগদ টাকাসহ গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। এবিষয়ে চিতলীয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আব্দুস সালাম হাওলাদার মুঠোফোনে জানান, তারা নিজেরা নিজেদের ঘরবাড়ি লুট করে আমার নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর পায়তারা করতেছে। তারা যে নিজেরা নিজেদের ঘরবাড়ি লুট করেছে তার ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে। তাছাড়া ঐ ভিডিও গুলো ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে তা আপনারা চাইলেও দেখতে পারবেন। এবিষয়ে চিতলীয়া ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা মাস্টার হারুন হাওলাদারের ছেলে সোহান হাওলাদার জানান, একটা পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি খুন হয়েছে। এখন বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে আমাকে সহ ইউনিয়নের নির্দোষ মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে। ভয়ে পুরো এলাকা পুরুষশূণ্য হয়ে পড়েছে। আর সুযোগে সালাম হাওলাদারের হুকুমে তার লোকজন আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি থেকে গরু বাছুর থেকে শুরু করে লবনের বাটি পর্যন্ত লুট করে নিয়ে গেছে। সত্যের একদিন জয় হবে এটাই আমার বিশ্বাস। এবিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, চিতলীয়ার ঘটনায় এপর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। আমরা ৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। মামলায় লুটপাটের ঘটনা উল্লেখ্য আছে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০৭ মে ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here