তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলায় মামার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

0
1500

আবু সায়েম, কক্সবাজার

কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক এসআই আবুল কালাম আজাদের সত্য তদন্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার বাদী  কক্সবাজার শহরের পুলিশ লাইন্স এলাকায় শিশু ভাগ্নীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়, নুরুন্নবী নামের ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এসময় তাকে আরো ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিজ্ঞ বিচারক মোসলেহ উদ্দিন। মামলার অন্য আসামি আমেনা বেগম ও মগনামার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর কে খালাস দেওয়া হয়।

জানা যায়, জায়গা জমিনের বিরোধের জের ধরে মামা তার নিজ ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে মামিকে কথিত মা সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে মামা-মামির ঠিকানা হলো কারাগারে। তৎকালীন কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের বিচক্ষণতায় প্রকৃত সত্য ঘটনা উদ্ভাবন সম্ভব হয়। প্রতিপক্ষ মৌলভী ফরিদের সাথে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার বাদী নূরন্নবী ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুনের জায়গা জমির বিরোধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। উভয় পক্ষের বিবিধ মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বাদী এবং বিবাদী তাদের উভয়ের বাড়ী পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মুহুরী পাড়া গ্রামের। প্রতিপক্ষ মৌলভী ফরিদকে কোনঠাসা করতে না পেরে নিজের ভাগ্নী ও তার পরিবারকে প্রলোভন দেখিয়ে মামা নিজেই ধর্ষণ করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। তারই অংশ হিসেবে মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বর্তমানে শহরতলীর জেল গেইট এলাকার বাসিন্দা আলমগীরের কুপরামর্শে তার বাসায় সুইটি আকতার (ছদ্ম নাম (১৪) কে নিজের মামা ধর্ষণ করে প্রতিপক্ষ মৌলভী ফরিদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৭। কিন্ত মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৯ সালে ভিকটিম সুইটির মা-বাবা পরিচয় দিয়ে মৌলভী ফরিদকে আসামী করে নারী নিযার্তন মামলা করা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত করতে গিয়ে সুইটি ও তার মা লতিফা বেগমের স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকৃত সত্য ঘটনা প্রকাশ পায়। মূলত বাদী নূরন্নবীর সাথে প্রতিপক্ষ মৌলভী ফরিদের জায়গা জমির বিরোধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। উভয় পক্ষের মামলা আদালতে বিচারাধীন। কোনভাবেই প্রতিপক্ষ কে দুর্বল করতে না পেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে তারা নিজেরাই ফেসেঁ গেলো। সত্য মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংস করে। তদন্তকারী কর্মকর্তার চৌকস কাযার্বলির মাধ্যমে এ প্রবাদ বাক্য সত্যিতে রূপান্তরিত হলো। নিজের ভাগ্নিকে দিয়ে মামা-মামি এ ধরণের অনৈতিক কাজ করায় পুরো জেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আরেকটা বিষয় সত্যিই ঘৃণিত এবং নিন্দনীয়! প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য নিজের ভাগ্নিকে ধর্ষণ করা, মূলত মানুষের হিতাহিত জ্ঞান ও বিবেক হারিয়ে ফেললে এ ধরণের জঘন্য ও ঘৃণ্যতম কাজ করতে পারে। পুলিশের মানবিক ও দায়িত্ববোধের ফলে একজন মানুষ মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেলো। আমরা শুধু পুলিশের খারাপ কিছুই নিয়ে পড়ে থাকি। আসলে পুলিশ যে মানুষের ভালোবাসার স্থান, নিরাপত্তার প্রহরী ও বিশ্বাসের অনন্য উদাহরণ তাঁর প্রমাণ তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি পুলিশ বিভাগের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সত্য ঘটনা উদ্ভাবন করায় পুরো জেলায় তিনি প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আরো জানা যায়, তদন্তকারী  কর্মকর্তার তদন্তের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ভিকটিম সুইটি ও তার প্রকৃত মায়ের জবানবন্দিতে মামা নূরন্নবী, মামী আমেনা খাতুন এবং জনৈক মেম্বার আলমগীরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মামলা করা হয়। যার মামলা নং ৬১, এবং তাদের মধ্যে মামা ও মামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছিলো।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে পুলিশ লাইন্সের পেছনের এলাকায় মামা নুরুন্নবীর নেতৃত্বে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন মা। ওই মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেয় তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ। নারীও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর আইনজীবী আবদুর শুক্কুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি জানান, শিশু ধর্ষণের দায়ে মামা নুরুন্নবী নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে আসামী পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক এসআই তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৯ সালে ভিকটিম সুইটির (ছদ্মনাম) কথিত মা সাজিয়ে ফটিকছড়ি একটি মসজিদের ইমাম ফরিদকে আসামী করে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলামের দিকনির্দেশনায় এবং তৎকালীন ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকারের তত্বাবধানে মামলাটি মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হওয়ায় ভিকটিম সুইটি ও তার প্রকৃত মায়ের জবানবন্দিতে মামা নূরন্নবী, মামী আমেনা খাতুন এবং জনৈক মেম্বার আলমগীরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে মামলা করা হয়। যার মামলা নং৬১। মামলায় ৩ জনকে আসামী করে চার্জশীট জমা দেয়া হয়। বহুল আলোচিত এ মামলায় বিজ্ঞ আদালত মঙ্গলবার মিথ্যা ধর্ষণ মামলার বাদী নুরুন্নবীকে ১ বছরের কারাদণ্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে বিজ্ঞ আদালত ন্যায় বিচার প্রদান করায় নিজের কষ্টের স্বার্থকতা খুঁজে পেলাম।

তিনি আরো বলেন, এ রায়ে মানুষ মিথ্যা মামলা থেকে বিরত থাকবে এবং এ মামলার রায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। মানুষের সাথে সমস্যা থাকলেও কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করার সাহস করবে না। তদন্ত প্রতিবেদনে মসজিদের ইমাম মৌলভী ফরিদ নির্দোষ প্রমাণিত হলো আর মিথ্যা মামলার বাদী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পেলো।

দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন/১১ মে ২০২২/জ কা তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here