ইমরান নাজির
শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নে ম্যাজিক মেশিনের মাধ্যমে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে চলেছেন প্রকাশ্যেই। চিকিৎসা শাস্ত্রের কোন ডিগ্রি না থাকলেও সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে সর্ব রোগের চিকিৎসক বনে গেছেন ভূয়া ডাক্তার মো: জহিরুল ইসলাম। জানা গেছে, ভূয়া চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পল্লীস্বাস্থ্য মেডিটেক ইনস্টিটিউট মানিকগঞ্জে এক বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট-ইন-ফিজিওথেরাপী টেকনোলজি কোর্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ঢাকাইজোড়া এলাকায় জনৈক বারেক এর বসতবাড়ির ঘর ভাড়া নিয়ে চিকিৎসার নামে চালিয়ে যাচ্ছেন অসহায় রোগীদের সাথে প্রতারণা। তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে। গতকাল শনিবার ১৪ মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূয়া চিকিৎসক জহিরুলের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই লেখাপাড়া না জানা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। জহিরুল শিবালয়ের ঢাকাইজোড়া এলাকায় একটি বসতবাড়ির ঘরের বারান্দার রুমে বসে একটি চায়না মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের রোগ নির্ণয় করছেন। বসতবাড়ির ঘরের বারান্দার রুমে বসে অপচিকিৎসা দিলেও বিভিন্ন রোগের মেডিকেল পরিক্ষা-নীরিক্ষার জন্য রোগীদের পাঠাচ্ছেন মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে বিভিন্ন পরিক্ষা-নীরিক্ষার আগেই হাজার হাজার টাকার ঔষুধ প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন তিনি।স্থানীয়রা জানান, ভূয়া ডাক্তার জহিরুল দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। আগে ইন্তাজগঞ্জ বাজারে বসে এমন অপকর্ম করায় তাকে বাজার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন সে একটি বাড়িতে ঘরভাড়া নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজন তার কাছে এসে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। অনেকেই জানে জহিরুল চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে, তবুও তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয়না। তবে ভূয়া চিকিৎসক জহিরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা। শিবালয়ের তাড়াইল গ্রামের মো: ফুলচান বলেন, হার্ডের সমস্যা ও এলার্জির সমস্যা নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমরা গরিব মানুষ। আমরা কি আর ভালো-মন্দ বুঝি? রোগী লিটন মিয়া তিনি এসেছেন পাশের জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে। তিনি জানান, বিভিন্ন লোকজনের কাছে এই ডাক্তারের কথা শুনে মেরুদন্ডের ব্যথা নিয়ে প্রথমবার এসেছি। ডাক্তারসাব ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে অনেগুলো ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এখানে এসে জানতে পারলাম তিনি ভূয়া ডাক্তার। চিকিৎসার নামে এমন প্রতারণাকারীদের শাস্তি হওয়া উচিৎ। অপর রোগী নাগরপুর থেকে আসা মনোয়ারা বেগম বলেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা নিয়ে দু’মাস আগেও এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম। দু’মাস ঔষধ সেবন করে কোন কাজ না হয়ায় এবার দ্বিতীয় বার খেদিয়েছি। এবাও আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে অনেকগুলো ওষুধ দিয়েছে। চিকিৎসক না হয়েও কিভাবে সব রোগের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন জানতে চাইলে মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি ফিজিওথেরাপী টেকনোলজি কোর্সে লেখাপড়া করছি। রোগী আসলে বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলে রোগীদের ওষুধ লিখে দেই। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো: মোয়াজ্জেম আলী খান জানান, ডাক্তার না হয়ে সে কোনভাবেই চিকিৎসা দিয়ে পার পাবেনা। তার বিরুদ্ধে অতিশীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৫ মে ,২০২২/ মওম