কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

0
304
রাশেদুজ্জামান তাওহীদ:
কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার ৯টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা।
বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষজন। দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা এবং বাঁশের তৈরী মাচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পাড় করছে। আবার অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু সড়কে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। বসত বাড়ী পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পনির সংকট। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানি বৃদ্ধি ফলে এসব চরাঞ্চলের অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পাঠদান রেখেছে শিক্ষা বিভাগ। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুরের জব্বার আলী জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে ঘরের ভিতর আর থাকার উপায় নেই। বর্তমানে নৌকায় অবস্থান করছি। ৩/৪দিন ধরে পানিতে বসবাস করছি। চুলা জ্বালাতে পারছি না। এখন পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাই নাই। জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের সহরত আলী জানান, কোন রকমে ঘরের মাচা উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না।  উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নের মশালের চর ও পুর্বমশালের চর সহ সবমিলে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়েছে। এরমধ্যে কিছু পরিবার ফকিরের চর আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও আশ্রয় কেন্দ্রটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি। বন্যা কবলিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নিকট খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবমিলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি জীবন-যাপন করছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ভারী বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশীর ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম এবং  বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে। অন্যদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, পানি তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ১শ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আপাতত পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেও অনেকটাই স্থিতিশীল অবস্থায়  রয়েছে। এখন পর্যন্ত যা পুর্বাভাস রয়েছে তাতে আগামী দুই দিন পর্যন্ত পানি সামান্য আপ-ডাউন করতে পারে। তারপর পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২শ ৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ১হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি  উপজেলা গুলোতেও দ্রুত শুরু হবে।
আলোকিত প্রতিদিন / ১৯ জুন ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here