নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মা সেতুর যারা বিরোধিতা করেছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাদের বিরোধিতার কারণে আমরা যে আত্মমর্যাদাশীল, আমরা যে পারি— সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। এতেই আমরা খুশি। এর বেশি নয়।’ ২২ জুন বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক বা বিরোধিতাকারীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা হলো, নিজের ভাড় ভালো না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কী? বিশ্বব্যাংককে আমি কী দোষ দেবো। তারা বন্ধ করলো কাদের প্ররোচনায়। সেটা তো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা। আর যারা বিভিন্ন কথা বলেছেন, তাদের কিছু কথা আমি উঠালাম। কথা আরও আছে। সেখানে আমার তো কিছু বলার দরকার নেই। এটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। আর না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরং আমি ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এ জন্যই যে, এই ঘটনাটি ঘটেছিল বলেই আমরা সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। আকজে বাংলাদেশের সম্মানটি ফিরে এসেছে। আমাদের দেশের বিষয়ে সবার একটা পারসেপশন ছিল, একটা মানসিকতা ছিল যে, আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই যে পরনির্ভরশীলতা, পরমুখাপেক্ষিতা আমাদের মাঝে ছিল। দৈন্যতা ছিল। সেই অচলায়তন ভেঙে আমরা যে আত্মমর্যাদাশীল, আমরা যে পারি—সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর যারা যারা এগুলো বলেছে, বিরোধিতা করেছে। তারা বুচ্ছে, আমরা ওদের দাওয়াত দিচ্ছি, ওদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাবো পদ্মা সেতুতে। দু’-একটাকে চুবনি খাওয়াতে হবে।’ বিশ্বব্যাংক কোনও একটি দেশের একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে দেশটি চাইলে অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে এমনটি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কিন্তু করা যায়। তা কিন্তু অনেকে জানেন না। জানিনা কেন জানেন না। আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ, যারা কাজ করে, তারা কেন মাথায় রাখেন না। এরা (বিশ্বব্যাংক) দাতা নয়। আমরা তাদের থেকে ভিক্ষা নেই না। ব্যাংকের একটি অংশীদার হিসেবে আমরা লোন নেই এবং সুদসহ সেই লোন পরিশোধ করি। কাজেই আমার নামে, বাংলাদেশের নামে যে টাকা হবে, সেই টাকা তাকে (বিশ্বব্যাংক) দিতে হবে। সে বাধ্য। জ্ঞানীগুণীরা বলেন, টাকা বন্ধ হয়ে গেছে। কীসের জন্য? আমরা তো লোন নিচ্ছি। যে লোন বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে সেই লোন কোনও না কোনোভাবে তাকে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ওই দাতা কথাটি বন্ধ করে দিলাম। আমি বলেছি, কীসের দাতা। এরা তো উন্নয়ন সহযোগী।’ গণমাধ্যমেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা কিন্তু কারও থেকে ভিক্ষা নেই না। আমরা ঋণ নেই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধও করি। এটুকু ঠিক, সুবিধাটা স্বল্প সুদ। আমাদের কেউ করুনা করে না। আমরা কারও করুনা ভিক্ষা নিইনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় আমরা কনসোর্টিয়ামের মিটিংয়ে প্যারিসে যেতাম। আমি বললাম, প্রত্যেক দিন আমরা যাবো কেন? ওরা এসে এখানে টাকা দিয়ে যাবে। আমি শুরু করলাম। আমরা ঢাকায় মিটিং করেছি। এই টেকনিক্যাল জিনিসগুলো জানা দরকার। আমাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’
আলোকিত প্রতিদিন/২২ জুন ,২০২২/ মওম