উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় এ দলটি। প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। রোজ গার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা ভাসানী সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ভাষা সংগ্রামের পথ ধরে ৬৬ সালে ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলনসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ তার ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন একটি মহতী ক্ষণে উদযাপন করছে, যখন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার অনন্য প্রতীক পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাতেই বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এই স্বপ্নের সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ৭৩ বছরের প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে দলটি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র করা হয়। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন। আব্দুল মালেক উকিল-জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক দশক ধরে সারা দেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনও হয় তার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। বর্তমানে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে দলটি। ৭৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নিয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৩ জুন বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এতে ভার্চুয়ারি যুক্ত হবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গৃহীত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দল ও সহযোগী নেতাকর্মী-সমর্থকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/২৩ জুন ,২০২২/ মওম