মিল্লাত হাসান:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় বড়দরগা এলাকায় বর্ষাকালে কুমার পাড়ায় মৃৎশিল্পীদের দূরঅবস্থা দেখার কেউ যেন নেই। মৃৎশিল্প প্রাচীন শিল্পকলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমোরের বা ক্ষিয়ার মাটি দিয়ে মৃৎশিল্পকর্ম করে কুমাররা। টালি, ক্ষুদ্র মূর্তি, ভাস্কর্য এমনকি ব্যবহারিক কারিগরি মৃৎশিল্পে তৈরী মাটির হাঁড়ি পাতিল মৃৎশিল্পের একেকটি রূপ হিসেবে তৈরী করে। বৃষ্টি বাদলের ছয়মাস কোনরকম মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা যায়না। রোদ থাকেনা মাটির জিনিসপত্র গুলো শুকাতে পারে না। তাই কুমারেরা এখন চায় আধুনিকতার ছোঁয়া। মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদিম মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে পৃথিবীর আদি ও অকৃত্রিম উপাদান মাটি দ্বারা মৃৎপাত্র নির্মাণ করেন।মৃৎপাত্র নির্মাণ থেকেই আদিম মানুষের শৈল্পিক চিন্তাভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। মৃন্ময়পাত্র বিশ্বের সব উন্নত সভ্যতায় সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে প্রাপ্ত নিদর্শন মৃৎশিল্পের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি বড়দরগা কুমার পাড়ায় গেলে জানা যায়, ৫০টি বাড়ি মিলে গঠিত কুমারপাড়া। প্রতেকটা বাড়িতে ৩/৭ জন করে মাটির কাজ করে। (১০০শত) বছর আগে থেকেই বাপ দাদার বংশের শুত্র ধরেই মাটি দিয়ে হাঁড়ি, কড়াই,বাটনা, তস্তি, হাতি, ঘোড়া, ব্যাংক, কলস,ফুলের টপ,বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প বিক্রি করে আসছে।তা দিয়ে তাদের সংসার চলে।
শ্রী নিমাই নামে একজন কুমার বলেন, আমরা বর্ষাকালের ছয়মাস মাটির কাজ করতে পারিনা। মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ সবকিছু বানানো কাজ বন্ধ থাকে। শুকাতে,পোঁড়াতে পারি না। প্রতেক সিজেনে ৩০/৬০ হাজার টাকার মাটি কিনতে হয়।সে মাটিও ঠিক ভাবে পাওয়া যায় না। মাটির হাঁড়ি, পাতিল, খেলনা ইত্যাদি জিনিসপত্র গুলো ১০ টাকা থেকে (১৬০) টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি সংসার চালাই সেটাও বন্ধ। চেয়ারম্যান মেম্বার আমাদের কোন সহযোগিতা দেয় নাই। খুব কষ্ট করে দিন কাল পার করে আসতেছি।একই পাড়ার শ্রী দেব চন্দ্রপাল বলেন, হামরা কুমারের কাজ করে খাই, এলাতো বৃষ্টি বাদলের দিন মাটির জিনিস গড়বার পাইনা, রইদ উটেনা,শুকপার পাইনা, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা খুব সমস্যা হয়া গেইচে। হামার এটে জনপ্রতিনিধি আছে তারাও হামাক কোনো কিছু দেয়না। অনার্স পড়ুয়া চন্দ্র পাল বলেন, কুমার পাড়ায় ৫০টি পরিবার আমরা সবাই মাটির জিনিসপত্র তৈরী করি। কিন্তু এইসময় মাটির জিনিসপত্র বানাতে ও বেঁচাইতে খুব কষ্ট। ঘরে যেগুলো মাটির জিনিসপত্র থাকে, রাস্তাঘাটের কারণে সেগুলো বিক্রির জন্য ছয় মাস বাজারেও তুলতে পারিনা।সরকারের কাছে আমার আবেদন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাংলাদেশ যেভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেভাবে যদি মৃৎশিল্প তৈরী করার ডিজিটাল স্বর আনজাম দিয়ে সহযোগিতা করে, তাহলে বর্ষাকালের ছয়মাস বসে থাকার দিন শেষ হয়ে যাবে। এই এলাকার চেয়ারম্যান বলেন,ইতিমধ্যে যা সরকারি বরাদ্দ আমার কাছে ছিলো তা আমি দিয়েছি।পরবর্তীতে আসলে আবার দিবো।এখন কিছু নাই দেবার মতো। ওনারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাটির জিনিসপত্র তৈরীর সরাঞ্জাম চেয়ে লিখিত আবেদন দিলে, আমি ইউএনও স্যারকে দিবো। স্যার যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে করবে।
মৃৎশিল্পীদের ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পর্কে মিঠাপুকুর উপজেলার ইউএনও ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন,মৃৎশিল্পীদের ডিজিটাল কোন পদ্ধতি এখনো হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কিনা আমি জানিনা। তবে কুমাররা আবেদন করলে আমরা উপরমহলে আলোচনা করে দেখবো।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৭ জুন ,২০২২/ মওম