অতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় পাঁচ পুলিশকে বদলি সিএমপি

0
354
পলাশ সেন:
জুবায়ের (ছদ্মনাম)। চট্টগ্রাম মহানগরীর একজন মিনিবাস চালক।গত মে মাসে রং পার্কিং করার কারণে কর্তব্যরত সার্জেন্ট তাকে নগরীর ইপিজেড এলাকায় একটি মামলা প্রদান করেন। সে মামলার কাগজটি নিয়ে হাজির হন আগ্রাবাদের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক বন্দরের কার্যালয়ে। এসে তার মামলার কাগজ দায়িত্বরত একজনকে দেখান। তিনি কামালকে বলেন, আপনার জরিমানা এসেছে ১৫ হাজার টাকা। আপনাকে এ টাকা পরিশোধ করে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে।
ট্রাফিকের এ সদস্যের কথা শুনে বিপাকে পড়েন কামাল। সে তড়িঘড়ি করে তার অন্যান্য সহকর্মী ও মালিকের সাথে কথা বলে ১০ হাজার টাকার মত ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু বাকি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে বলে দেয়া হয়- ‘আপনি পুরো টাকা ব্যবস্থা করতে না পারলে গাড়ির কাগজপত্র দেয়া হবে না।’ এ কথা শোনার পর কামালের মন ভেঙে যায়। কি করতে হবে বুঝতে না পেরে তার গাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করে ১৫ হাজার টাকা ব্যবস্থা করলে তার মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে ফিরে যায়।
এলাকায় ফিরে কামাল অন্য এক চালকের সাথে তার এতটাকা জরিমানার বিষয়ে আলোচনা করে। সেখানে জানতে পারে রং পার্কিং এর জরিমানা মাত্র তিন হাজার টাকা। কামাল পরবর্তীতে বিষয়টি বন্দর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানাকে অবহিত করেন। বন্দর ট্রাফিকের ডিসি যাচাই বাছাই করে দেখেন যে, বিষয়টি সঠিক। পাশাপাশি অন্যান্য চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার প্রমাণও পান ডিসি। তিনি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন যে, তাদেরকে বদলি করতে হবে। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে পাঁচ ট্রাফিক অফিস থেকে দায়িত্ব সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অন্যান্য সদস্যদের মত দায়িত্ব পালন করার আদেশ জারি করেন ডিসি শাকিলা সুলতানা।ট্রাফিক সদস্যরা হলেন- কনস্টেবল পরিমল, মো. মাহবুব, মো. এনাম, মোসলেহ উদ্দিন, আতিকুর রহমান ও মো. মুক্তার।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইনের ৯২(১) ধারার অন্তর্ভুক্ত অপরাধগুলো হলো- মোটরসাইকেলে ৩ জন বসা, হেলমেট না পরা, ফুটপাতের উপর মোটরসাইকেল চালানো ইত্যাদি। ৯২(২) ধারায় গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বললে, সিট বেল্ট না বাঁধলে, যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা অনধিক ১ মাসের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এতে ১ পয়েন্ট কাটা হবে চালকের। সড়কে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে নিকটস্থ থানা/ফায়ার সার্ভিসে না জানালে, আহত ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা ১ মাসের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর এ ধারা ভঙ্গ করলে ১ পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। ৯২(৩) ধারায় রাস্তায় রং পার্কিং করলে তিন হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে আড়াই হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, বর্তমানে সার্জেন্টরা পস মেশিন ব্যবহারের ফলে জরিমানার টাকাটা সরকারি কোষাগারে জমা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের উর্ধ্বতন কমকর্তারা। পস মেশিনে গাড়ির নম্বর, মামলার কারণ লিখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরিমানার পরিমাণ সার্ভারে সংরক্ষিত হয়ে যায়। এরপর গ্রাহককে তাৎক্ষণিক একটি রসিদ দেওয়া হয়। মামলা হওয়া সাথে সাথে গাড়ির জরিমানার ব্যাপারে সব তথ্য তাৎক্ষণিক পুলিশের কেন্দ্রীয় সার্ভার ও সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে জমা হবে। এর ফলে গাড়ির মালিক বা চালককে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে জরিমানা প্রদান করতে হয় না। ইউক্যাশের মাধ্যমে সরাসরি টাকা জমা দেয়া যায়। কিন্তু চালকদের অজ্ঞতার কারণে ট্রাফিক অফিসে এসে তারা টাকা জমা দেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকেন।
সিএমপি বন্দর ট্রাফিকের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, মূল জরিমানা থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ আমরা পেয়েছিলাম। সেটা তদন্ত করে তার সত্যতা পেয়েছি। তাই গত ১ জুন থেকে তাদেরকে গতানুগতিক ডিউটি অর্থাৎ, রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া আমি আমার অফিসকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চাই। কোন গ্রাহক যদি জরিমানা প্রদানে কোন অসুবিধা অনুভব করে, তাহলে সরাসরি যেন আমার সাথে কথা বলে। আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাটি প্রদান করার চেষ্টা করব।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৮ জুন ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here