কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সামাজিক বনায়নে পাল্টে দিয়েছে ১৪৮৫ পরিবারের জীবন

0
284
আবু সায়েম:
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও  মোঃ আনোয়ার হোসেন সরকারের নেতৃত্বে ধারাবাহিক সফলতার মাধ্যমে সামাজিক বনায়নে পাল্টে দিয়েছে ১৪৮৫ পরিবারের জীবন।কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বর্তমান ডিএফও যোগদানের পর থেকে বনজ সম্পদ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।সব বাধা অতিক্রম করে ডিএফও’র নেতৃত্বে চলছে বনবিভাগের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। চৌকস কার্যাবলির মাধ্যমে বন্য হাতি সংরক্ষণ বনজসম্পদ রক্ষা, বনভূমি উদ্ধারে তিনি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছেন। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন ১০ টি রেঞ্জে সফলতার দ্বার উন্মোচনে অনন্য নিদর্শন রেখেছেন ডিএফও মোঃ আনোয়ার হোসেন সরকার।
বনভুমি দখল, গাছ সাবাড়ের মাঝেও বনের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে আসছে সামাজিক বনায়ন। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ সামাজিক বনায়নের ধারাবাহিক সাফল্য অক্ষুণ্ণ রেখেছে। জেলার উত্তর বনবিভাগের অরক্ষিত বন ও অব্যবহৃত পতিত সরকারি ভূমিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রম পরিচালনা করে ধারাবাহিক সফলাও পেয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে বড় হওয়া গাছ কর্তন করে তা নিলামে বিক্রির পর চুক্তি অনুসারে টাকার ৪৫ পার্সেন্ট লভ্যাংশ উপকারভোগীদেরও দেয়া হয়েছে।  এ পদ্ধতিতে ২০১৩-১৪ সাল থেকে এ যাবৎ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন ১০টি রেঞ্জের ১৮টি বনবিটে ১৪৮৫ জন উপকারভোগীর মাঝে লভ্যাংশের ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। আর বনায়নের গাছ বিক্রি করে অর্জিত হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা।  ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে শুধু এই কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে ৫৫ জন উপকার ভোগীর মাঝে প্রথম অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা বিতরণ করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা বেশী অর্জন হয়েছে।
২০১৭-২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন জটিলতায় আটকে থাকে অনেক উপকার ভোগীর লভ্যাংশের টাকা। ডিএফও মো. আনোয়ার হোসেন সরকার যোগদানের পর জটিলতা নিরশন করে উপকারভোগীদের লভ্যাংশের টাকা ছাড় দিয়েছেন। টাকা পেয়ে অংশীদারদের মাঝে বিরাজ করে খুশির আমেজ, ফিরেছে স্বচ্ছলতা।তবে, এখন থেকে বনায়নের লভ্যাংশের টাকা ঘরে বসে পাবেন  উপকারভোগীরা। এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার। লভ্যাংশের অর্থ উপকারভোগী পরিবারের প্রায় ৫ হাজার জন সদস্যের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরটা অর্জনে সহায়তা করেছে বলে জানান উপকারভোগীরা।  বনায়নে লভ্যাংশে টাকা পাওয়া উপকার ভোগী সানজিদা সরওয়ার, মৌলভী আবু বক্কর, আবদুল হামিদসহ অনেকেই জানান, বনবিভাগের বনায়ন কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কারণে প্রকল্পটি সার্বিক সফলতা অর্জন করেছে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের সম্পৃক্ত করায় আরো সফলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে দিনদিন।
তারা বলেন, যেদিন উপকারভোগী নির্বাচিত হয়েছিলাম সেদিন কল্পনাও করিনি দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করেও বন পাহারা দিয়ে লাখ টাকা লভ্যাংশ পাব। এ টাকা প্রাপ্তি আমাদের পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমারা টাকা পেয়েছি দেখে পাড়ার অন্যরাও এখন বনরক্ষায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এটি আমাদের জন্য বড় পাওনা। বনবিভাগের তথ্য মতে, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত বনভূমি এবং সরকারী অব্যবহৃত পতিত জমিকে উৎপাদনমূখী করে নির্ধারিত সময়ে বড় হওয়া পরিপক্ক গাছ কেটে নিলামের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকার গাছ বিক্রী করা হয়েছে।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন,সামাজিক বনায়ন থেকে লভ্যাংশের টাকা পেয়ে উপকার ভোগী পরিবারে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল হয়েছে। পাশাপাশি,শত শত মানুষের কর্মসংস্থান, বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা এবং তাদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানী, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণ করা। এটা আশানুরূপ সফল হয়েছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে। ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার আরও বলেন, ১০ শতাংশ টাকা পরবর্তী বনায়নের জন্য গচ্ছিত রেখে বাকি টাকা (৪৫ পার্সেন্ট)  বিতরণ করা হয়েছে অবশিষ্ট ৪৫ পার্সেন্ট টাকা পেয়েছে সরকার। সামাজিক বনায়নের লক্ষ্য শুধু গাছ নয়, গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীও। এ ধরনের সহায়তার লক্ষ্য শুধু গাছ লাগানো ও সেই সব গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য নয়, বরং গাছ রোপণকারীরা যাতে লাগানো গাছের সুফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বসম্মানে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তারও নিশ্চয়তা বিধান করেছে বনবিভাগ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থসাহায্যে গৃহীত গোষ্ঠী বনায়ন প্রকল্প থেকেই মূলত সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি শুরু করে, পর্যায়ক্রমে তার সফলতাও এসেছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা । তিনি আরও বলেন, জেলার প্রান্তিক জনপদের অংশীদারিত্ব বনায়নের উপকার ভোগীরা তাদের লভ্যাংশ ঘরে বসে পেয়ে যাবেন। এ লক্ষ্যে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়েছে। এখন লভ্যাংশ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ শুরু করেছে বন বিভাগ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৯ জুন ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here