বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন বদলে  দিয়েছে  ১৭৬টি পরিবারের জীবন

0
265
আবু সায়েম:
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও মোঃ সারওয়ার আলমের  নেতৃত্বে ধারাবাহিক সফলতার মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন  বদলে দিয়েছে ১৭৬  পরিবারের জীবন। কক্সবাজার দক্ষিণ  বনবিভাগের বর্তমান ডিএফও যোগদানের পর থেকে বনজ সম্পদ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। ডিএফও’র সুযোগ্য  নেতৃত্বে চলছে বনবিভাগের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। চৌকস কার্যাবলির মাধ্যমে বন্য হাতি সংরক্ষণ বনজসম্পদ রক্ষা, বনভূমি উদ্ধারে তিনি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছেন। কক্সবাজার দক্ষিণ  বনবিভাগের আওতাধীন ১০ টি রেঞ্জে সফলতার দ্বার উন্মোচনে অনন্য নিদর্শন রেখেছেন ডিএফও মোঃ সারওয়ার আলম ।
দিগন্ত জোড়া বনপথে সবুজের ছড়াছড়ি। বনের বুক চিরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। সড়কের পাশে বনপথের একটি জায়গায় এসে যে কারও চোখ কিছুক্ষণের জন্য হলেও আটকে যেত। জায়গাটির নাম দক্ষিণ খুনিয়াপালং জমিরাঘাটা। নানা জাতের গাছের সুশোভন দৃশ্য দেখলেই ইচ্ছে করতো ওই জায়গায় একটুখানি দাঁড়াতে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ধোয়াপালং রেঞ্জাধীন খুনিয়াপালং বনবিটের অধীনে ১৫ হেক্টর  বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন করে ৩০ জন গরিব মানুষ এখন লাখপতি হয়েছেন। তাঁদের কেউ ভূমিহীন, কেউ হতদরিদ্র বিধবা, আবার কেউ অসচ্ছল কৃষক।
১০ বছর আগে সবারই ছিল নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। বন বিভাগ ২০০৬-২০০৭ সালে তাঁদের প্রত্যেককে স্বচ্ছল করে তোলার লক্ষ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ধোয়াপালং রেঞ্জের খুনিরা পালং জমিরাঘাটা নামক এলাকায় সামাজিক বনায়ন সৃজন করে। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং  ইউনিয়নের জমিরঘাটা এলাকায় ১৫ হেক্টর বনভূমি বরাদ্দ দেয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এখানকার প্রাকৃতিক বা সরকারি সংরক্ষিত বন অনেক আগেই উজাড় হয়ে গিয়েছিল। এই বনভূমিতে যে বিস্তৃত সবুজ বন তার সবটুকুই বরাদ্দপ্রাপ্তদের সৃষ্ট সামাজিক বনায়ন। এই বনভূমিতে সামাজিক বনায়নের অংশীদার হয়েছেন এক সময়ের ভূমিহীন রামু খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দক্ষিণ খুনিয়াপালং এলাকার গুলজার বেগম ও শফিকা বেগম। সম্প্রতি কথা হয় উপকারভোগী গুলজার বেগম ও শফিকা বেগমের সঙ্গে। তাঁদের মতে, এই বনায়ন তাঁদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জুগিয়েছে প্রতিদিনের অন্নও। গুলজার বেগম ও শফিকা বেগমের  মতো আরও ২৮ জন হতদরিদ্র মানুষ রাতদিন কষ্ট করে নিজের সন্তানের মতো পরিচর্যার মাধ্যমে সামাজিক বনায়নটি বাস্তবায়ন করেছে।  গত জানুয়ারী মাসে নিলামে কাটা হয় বনের গাছগুলো।  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশাছিল, গাছগুলো বিক্রির পর তাঁদের একেকজন কয়েক লাখ টাকার মালিক হবেন। রাতের আঁধার কাটিয়ে তাঁদের আঙিনায় দেখা দেবে ভোরের সোনালি আলো। তাদের আশা সফল হয়েছে।
উপকারভোগী শফিকা বেগম বললেন, ‘আমার চাল-চুলো কিছুই ছিল না। এই সামাজিক বনায়নের অংশীদার হতে পেরে আমি নতুন করে বাঁচার সাহস পেয়েছিলাম। টাকা পেয়ে আমার পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তিনি জানান, রাতদিন বাগান পাহারা দিয়েছেন। আর এই বাগান থেকে কুড়ানো পাতা, লাকড়ী বিক্রি করে ১০ বছর ধরে সংসারের খরচ মিটিয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, চার-পাঁচ টাকায় প্রতিটি চারাগাছ কিনে প্রতি হেক্টর বনভূমিতে দুই হাজার ৪০০-৫০০টি চারাগাছ লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু গাছ নষ্ট হলেও হেক্টরে দুই হাজারের মতো গাছ ছিল। এখন একেকটি গাছ দুই-আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। গত মার্চ ও এপ্রিল  মাসে নিলামে বিক্রির মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হয়। বিক্রির টাকা থেকে ৪৫ ভাগ উপকারভোগীদের এবং ৪৫ ভাগ বন বিভাগের তহবিলে দেওয়া হয়। বাকি ১০ ভাগ রাখা হয় পরবর্তী বাগান করার জন্য। ধোয়াপালং রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্বল্পমেয়াদি এই বাগানে একাশিয়া হাইব্রিড, ভাদি, বকাইন, বহেরা, হরীতকী, আমলকী, অর্জুন ও কদমসহ নানা প্রজাতির গাছ ছিল। বনায়নের গাছগুলো বিক্রির টাকা থেকে বন বিভাগের প্রাপ্য অংশ বাদ দিয়ে উপকারভোগীরা একেকজন ৮৮ হাজার টাকা করে ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। তাঁর মতে, এই বাগানসহ কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আরও ৬টি রেঞ্জের ৯ বিটের নিলাম দেয়া বাগান সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে একটি মডেল। বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে,
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপকার ভোগীদের মাঝে লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে।
টেকনাফ রেঞ্জের হ্নীলা বিটের সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রির লভ্যাংশ পেয়েছে ৩৪ জন উপকারভোগী ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৪ টাকা ,কক্সবাজার রেঞ্জের লিংক রোড কাম চেক স্টেশন ১৯ জন উপকারভোগী পেয়েছে ৫২ লাখ ২৩ হাজার ২৯ টাকা৷ , শীলখালী রেঞ্জের শীলখালী মাথাভাঙ্গা বিটের ১০ জন উপকার ভোগী পেয়েছে ৪১ লাখ ৫৩ হাজার ৭০ টাকা , শীলখালী রেঞ্জের শীলখালী মাথাভাঙ্গা বিটের ৮ জন উপকার ভোগী পেয়েছে ৩৩ লাখ ২২ হাজার ৯১ টাকা , শীলখালী রেঞ্জের শীলখালী মাথাভাঙ্গা বিটের ১ জন উপকার ভোগী পেয়েছে ৪১ হাজার ৫৩৭ টাকা , উখিয়া রেঞ্জের ভালুকিয়া বিটের ৩৫ জন উপকার ভোগী পেয়েছে ৫৭ হাজার ১৫ টাকা ৩৫ টাকা, ধোয়াপালং রেঞ্জের খুনিয়াপালং বিটের ২৭ জন উপকারভোগী ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ১২৭ টাকা , রাজারকুল রেঞ্জের দারিয়ার দীঘি বিটের ৪১ জন উপকার ভোগী পেয়েছে ২৫ লাখ ৬৮ হাজার  ৫২৭ টাকা ও টেকনাফ রেঞ্জের হ্নীলা বিটের ১ জন উপকার ভোগী পেয়েছে  ১ লাখ ১২৭৬ টাকা। চলতি অর্থ বছরে খুনিয়াপালং বিট ও ধোয়াপালং বিটে আরও ১৬৮ জনের মাঝে এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিতরনের প্রস্তুতি আছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম জানান, ৬ টি রেঞ্জে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১৭৬ জন সামাজিক বনায়নের উপকার ভোগীর মাঝে ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর সমপরিমাণ অর্থ বনবিভাগও রাজস্ব পেয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা সামাজিক বনায়নের গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০২ জুলাই ,২০২২/ মওম         

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here