ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আতঙ্কের নাম ‘সেলফি’ পরিবহন

0
268
বাবুল আহমেদ :
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আতঙ্কের নাম সেলফি পরিবহন। মহাসড়কে প্রায় অর্ধেক দুর্ঘটনা ঘটায় এই পরিবহন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তরা ব্রিজের উপরে সেলফি পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হয়েছে দুই ছাত্র। এতে বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় একটি সেলফি বাসে। ভাঙচুর করে আরও দুটি বাস।
১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সেলফি পরিবহনের কয়েকজন চালক ও সুপারভাইজার এর সাথে কথা বললে, নাম প্রকাশ না করার কথা বলে জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০টি সেলফি পরিবহন বাস চলাচল করে। বেশির ভাগ চালকের বড় গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা কম। বসের মালিকরা অল্পটাকায় এই সব চালকদের চাকরি দেন। আবার অনেক চালকের লাইন্সেস নাই।
তারা বলেন সেলফি পরিবহন বাস গুলো এক সময় দূর-পাল্লার বাস ছিল। সেখান থেকে এনে ঢাকা-অরিচা মহাসড়কে সেলফি পরিবহন করা হয়েছে। এসব গাড়ি দক্ষ চালক দিয়ে চালাতে হয়। অনেক চালক ছোট গাড়ি চালিয়ে এসে, যখন বড় গাড়ির পিকাপে পাড়া দেয়, তখন শা, শা করে দৌড়ায় গাড়ি। বড় গাড়ির চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় তারাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও প্রতি ট্রিপে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা পরিবহন মালিককে দিতে হয়। এরসাথে আছে বিভিন্ন ধরণের চাঁদা। এরপর যা থাকে সেই টাকা চালক ও হেলপার পেয়ে থাকে। সে জন্য বেশি টিপ দেওয়ার জন্য চালকেরা দ্রুত গাড়ি চালায় বলে জানায়।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানাযায়, এবছরের জানুয়ারি থেকে গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯জন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এই পরিসংখ্যান ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রায় অর্ধেক। কালামপুর থেকে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট পর্যন্ত। এই পরিসংখানের মধ্যে অধিকাংশই সেলফি পরিবহন দুর্ঘটনা ঘটায়। তবে নিহত ও আহত পরিবারে সাথে যানবাহনের কর্তৃপক্ষ সমঝোতা করার কারণে মামলা কম হয়। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন ঢাকা আরিচা মহাসড়কে এই পরিবহন চলাচল নিষেধ করার জন্য মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক এর কাছে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মনিকগঞ্জ সদর উপজেলার ইমরান খান বলেন, সেলফি পরিবহন বাসটি অনেকটা দূরপাল্লা বাসের মত। চলাচলের জন্য আরামদায়ক। চালকদের দ্রুত গতিতে চালানো ও দক্ষ চালক না থাকায় সেলফি পরিবহন বেশি দুর্ঘটনা হয়। প্রায় প্রতিদিনি পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনে সেলফি পরিবহন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও আহত হয়েছে এমন সংবাদ জানতে পারছি। আমি নিজেও দেখেছি সদর উপজেলার মূলজান এলাকায় সেলফি পরিবহন দ্রুত গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায়। রঙলাইনে গিয়ে ট্রাকের মুখ মুখি সংঘর্ষে হয়। সংর্ঘর্ষে ১ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছিল। তার পর থেকে আমি আর সেলফি পরিবহনে যাতায়াত করিনা।
গত মে মাসে বারবাড়িয়া সেলফি পরিবহনের একটি বাস খাদে পড়ে যায়। সে সময় গুরতর আহত হয় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্রন্ডের চা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন। তার সাথে সেলফি পরিবহনের কতৃপক্ষ সমঝোতা করে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে। সে কারনে কোন মামলা করেনি তিনি বলে জানান। বরঙ্গাইল হাইওয়ে পুলিশ ও ফাড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন জানান, গত ৫ মাসে সেলফি পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে আনুমানিক ৬টি দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে। এখনও দুটি বাস ফাঁড়িতে আটক রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ জানান, আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বেপরোয়া সেলফি পরিবহনের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। সেলফি পরিবহনের বিষয়টি লিখিত আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৫ জুলাই ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here