ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শিশু লিজা হত্যার প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হবিগঞ্জ । চাঞ্চল্যকর এই হত্যার প্রধান আসামী তাকবীর হাসান (২০)কে খুলনা থেকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গত ২৩ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে খুলনার হালিশপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় । গ্রেপ্তারকৃত তাকবীর মাধবপুর উপজেলার আইলাবই গ্রামের সাইদুর রহমান ওরফে মোহন মিয়ার ছেলে।
জানা যায়,গত বছরের ২১ জুলাই ঈদ-উল-আযহার দিন সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে নিহত তাহমিনা আক্তার লিজার মা সেলিনা বেগম তার মেয়েকে পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের একটি দোকান থেকে নুডুলস ও প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিনে আনার জন্য পাঠান। পরবর্তীতে তার মেয়ে নুডুলস নিয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসলে আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে খোঁজাখুজি করে মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে সেলিনা বেগম মাধবপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী করেন। পরবর্তীতে গত বছরের ২৫ জুলাই সকাল ১১ টার দিকে ওই গ্রামের ২ মহিলা গ্রামের বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে নিহত লিজার অর্ধ-গলিত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে নিহত লিজার মা সেলিনা বেগমকে খবর দেন।
তাৎক্ষনিক সেলিনা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মেয়ের অর্ধ-গলিত মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এই মর্মে লিজার বাবা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হবিগঞ্জ পিবিআই। তখনকার পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম (বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপি) এর সঠিক দিক নির্দেশনায়, পিবিআই হবিগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোঃ আল মামুন শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহনেওয়াজ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে মামলার প্রধান আসামি তাকবীর হাসানকে গ্রেফতার করে।এর আগে এই মামলায়, অভিযুক্ত প্রেমিক বাহার উদ্দিন, প্রেমিকা খাদিজা আক্তার তাজরীন, প্রেমিকার মা আমেনা খাতুনকে গ্রেফতার করেছিল পিবিআই।মামলা সূত্রে জানা যায়, খাদিজা আক্তার তাজরীন এর ছোট ভাই তাকবীর হাসান (২০) এর সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর সিরাজের মেয়ে শান্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।সম্পর্ক চলাকালীন সময় একদিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়ীর পাশে শান্তা এবং তাকবীর দেখা করার সময় নিহত লিজা তাদের দেখে ফেলে। পরবর্তীতে নিহত লিজা উক্ত ঘটনাটি শান্তার মাকে জানায়।
শান্তার মা বিষয়টি জানার পর শান্তাকে গালি-গালাজ করে এবং শান্তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। একপর্যায়ে শান্তার সাথে প্রেমিক তাকবীরের প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে তাকবীর ক্ষিপ্ত হয়ে লিজাকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে গত বছরের ২১ জুলাই সকাল ৭টার দিকে লিজা পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের দোকান থেকে নুডুলস ও জর্দ্দার কৌটা কিনে বাড়ি ফেরার পথে তাকবীর নির্জন জায়গায় নিহত লিজাকে মামা ওয়েফার নামক চকলেট এর লোভ দেখিয়ে ভুলিয়ে তাদের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর লিজার লাশ সে তার পরিবারের সহায়তায় বস্তাবন্দি করে বসতঘর সংলগ্ন গোয়ালঘরে লুকিয়ে রাখে।
হত্যার ৪ দিন পর অর্থাৎ গত বছরের ২৪ জুলাই লিজার মৃতদেহ থেকে দূর্গন্ধ বের হলে তাকবীর তার পরিবারের লোকজন ও আসামী বাহার উদ্দিন-এর সহায়তায় রাতের আঁধারে লিজার মৃত দেহটি আইলাবই গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে ফেলে দেয়।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৫ জুলাই ,২০২২/ মওম