প্রগতিশীল ছাত্রনেতা ও কবি মোজাফফার বাবুর জন্মদিন

0
575
আলোকিত ডেস্ক:
আগামী ২৮ আগস্ট ২০২২, রবিবার , অন্যধারা সাহিত্য সংসদ ভার্চুয়াল কমিটির সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ও কবি মোজাফফর বাবুর শুভ জন্মদিন।
কবি, গল্পকার, কথা সাহিত্যিক ও আশির দশকে প্রগতিশীল ছাত্র নেতা মোজাফফার বাবু ২৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মানবতাবাদী নতুন সমাজের দিশারী আদর্শে অবিচল এমন একজন বিরল ব্যক্তিত্ব মাস্টার ইমান আলী এবং মাতা শেফালী খাতুনের ঘর আলোকিত করে আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন যশোর সদরের খড়কির সার্কিটহাউজের বাড়িতে।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসভবনে।
মোজাফফর বাবু যশোরের খড়কি প্রাইমারি স্কুল পড়ে তৃতীয় শ্রেনীতে যশোর জেলা স্কুল ভর্তি হন সেখান থেকে ১৯৮০ সালে যশোর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে। ১৯৮২ সালে যশোর পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ইন কমার্স পড়েন পড়ে ১৯৮৪সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানে অধ্যায়ন শুরু করেন।
তাঁর পিতামহ ছিলেন একজন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী প্রগতিশীল চিন্তাধারার এক মানবতাবাদী যার নাম মাষ্টার ইমান আলী । তার আদি পরিবার ছিল প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী।
তার বড় চাচা ডাক্তার লুৎফর বিশ্বাস, মেজ চাচা মোহাম্মদ খেলাফত বিশ্বাস ছিলেন মানবতাবাদী । ১৯৩৩ সালে ভারতবর্ষে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সেজ চাচা মোঃ বেলায়েত হোসেন।
জাতপাত ও শ্রেণীবৈষম্যের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ, তাদের বাসায় বহু গুণি লোকের যাতায়াত ছিল। তার মধ্যে , শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ইব্রাহিম খাঁ, শ্রী সুধির বাবু, মোহাম্মদ সুলতান , আবদুল হামিদ খান ভাসানী , প্রতাপ উদ্দিন আহাম্মেদ , ডাক্তার এম এ করিম ,শ্রী নারান মাস্টার ও শরীফ প্রফেসরসহ প্রমূখ।
বালক বেলা থেকে কবি সাংস্কৃতিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ছোটবেলা থেকে নিজ উদ্যোগে যশোর সদরে ‘ঘোপ শিশু-সংঘ’ নামে সরকারের নিবন্ধনকৃত সংগঠন গড়ে তোলেন ।
বিভিন্ন দিবসের রচনা ও নির্দেশনায় ” একুশের ডাক”, “স্বাধীনতা”,” বাংলার শহীদ মিনার” শিরোনামের নাটক মঞ্চস্থ করেন। যেমনঃ ঢাকা ড্রামা সার্কেলের পক্ষ থেকে মহিলা সমিতির মঞ্চের মঞ্চ নাটক ও টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন।
অন্যধারা সাহিত্য সংসদ ভার্চুয়াল কমিটির লাইভ অনুষ্ঠান , বঙ্গীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ , কৃষ্টি বন্ধন সাহিত্য সংসদ, শুদ্ধ চিত্ত বাংলাদেশ ,ভিন্নমাত্রায় সহ বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতির অনুষ্ঠানে আলোচনা ,আবৃত্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে জাতীয় আন্তর্জাতিক ভাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন পাঠক সমাজের কাছে ।
সংগঠক হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় ‘সাপ্তাহিক অন্যধারার সম্মাননা স্মারক ২০২০’ লাভ করেন , ভিন্নমাত্রা ও বিভিন্ন অভিনয় আবৃত্তিতে পুরস্কার লাভ করেন ।
এই প্রগতিশীল কবি বালক বেলা থেকে নতুন সমাজ বিনির্মাণে কাজ করতেন। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইন কমার্স কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের বিপুল ভোটে তিনি ভিপি নির্বাচিত হন এবং আশির দশকে ঢাকায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন ।
তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখনীর মধ্যে গল্পে রয়েছে, “জীবনের পথ চলায় আণবিক নয় ;স্বাস্থ্য কৃষি জীব-বৈচিত্র গুরুত্বপূর্ণ “,”অধরা টমটম গাড়ি” ইত্যাদি; কবিতার মধ্যে রয়েছে, ” শিকড়ের সান্নিধ্যে”,” ময়নাতদন্ত”,” কফি হাউজের আবছায়া”, “খড়ায় পুড়ে মধ্যপ্রাচ্য”,” তখনো জর্জ ফ্লয়েড” ইত্যাদি।
বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমসাময়িক ঘটনার উপর বাস্তব ঘটনার তথ্য উপাত্ত সহ মানব মনের অব্যক্ত কথা পৃথক পৃথক চিত্রকল্প কবি মোজাফফর বাবু গল্প গ্রন্থের মাধ্যমে প্রাণবন্ত ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যেমন “জীববৈচিত্র্য”,” প্রান্তিক অবহেলিত কৃষক”,” ঘাতক করোনাভাইরাস”,” চেতনায় মাস্টার ইমান আলী “ইত্যাদি।
সমাজে অবহেলিত মানবিক মূল্যবোধ অবক্ষয়, করোনাভাইরাসে অসহায়ত্ব জীবনের প্রকাশ পেয়েছে এ গল্পগ্রন্থে।ছোট ছোট বাক্যে লেখা অনেক সুন্দর গল্প আছে যা পাঠকের মনে স্থান করে তার নির্বাচিত বই সমূহঃ
কাব্যগ্রন্থ – কফি হাউজের আবছায়া
উপন্যাস – প্রথম প্রকাশ – তালুক
দ্বিতীয় উপন্যাস -অবাক জোছনা
গল্প গ্রন্থ – উলুখাগড়াদের গল্প,কুহেলিকা।
অবসর সময়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম,সুকান্ত ভট্টাচার্জ ,ষ্টিফেন হকিন্স ও চে গুয়েভারার ওপর পড়াশুনা করেন।
নির্জনতা একাকিত্ব, সাগরের তীরে ,পাহাড়ের মাঝো ,খোলা আকাশের নিচে থাকতে পছন্দ করেন একাধারে তিনি প্রকৃতি প্রেমিক ও সদালাপী ।
আগামী বই মেলায় নতুন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের আশাবাদ তিনি ব্যক্ত করেন ।
কবি মোজাফফর বাবুর কবিতা :
সুহাসিনী-
হয়তো ভাবোনি কোনদিনও সেই ছেলেটির কথা
শিমুল-ছায়ায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন যে তোমারই অপেক্ষায়
কাটিয়েছে বিকেল-সন্ধ্যা-সাঁঝ,
ডাহুক ডাকা ভোরে
রোদেলা দুপুরে
বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে
একটু আসা একটু দেখা কতোই কারুকাজ।
দু’চোখ চেয়ে থাকে
ঢেউয়ের বাঁকে বাঁকে
মৃদু-মন্দ আশার আলো ভালোই মনে রাখে।
সুহাসিনী-
তোমার জাদুর পরশে জ্বলে ওঠা
সেই ছেলেটির আমি
জেগে ওঠে আমার মাঝে
শুভ্র মেঘের নীলাকাশে।
———————————
ময়নাতদন্ত
নিবারণ হাঁটু গেড়ে বসে আছে
চোখের কোণে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো
ফোটা ফোটা জল
কিছু আগে যা ছিলো বেদনার নদী, এখন
প্রতীক্ষার ঘাম যেনো!
হাসফাঁস হাসফাঁস করছে তার মন।
দিন গেছে বিকেলের রোদ ছুঁয়ে
গোধূলি ফুরিয়ে হয়েছে সন্ধ্যা
এখন রাত নির্ঘুম চোখ
সে চোখে শুধুই প্রতীক্ষা-
কখন আসবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন।
বিরক্তিকর মোবাইল প্যাচাল
সারশূন্য অযথা ক্যাচাল,
বুকে ওড়ে মরুভূমির বালুঝড়
যে ঝড়ে আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নসাধ
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়
হয়ে যায় পর, আরও পর ।
ডোম, ডাক্তার, মর্গের চাবি,
হাতুড়ি, কাঁচিতে যেন
ট্রাফিক জ্যাম!
পিপাসা দহনে ক্লান্তির ঘামে
দিনলিপি যায় ঢেকে ,
চারদিকে নিষ্ঠুর হন্তারক
জাতসাপ শার্দুলে ভরপুর ।
লাশ ফুলে ফেঁপে যায়
দুর্গন্ধ ছড়ায়
নিবারণ প্রতীক্ষায় থাকে
কোথায় পায় নগদ নারায়ণ।
লাজ সরম ভুলে
ডোম চারাল কত না হাতায়
জামা কাপড় কাথায়
গাট্টিগাট্টা, পকেটে-জ্যাকেটে!
হরিবল হরিবল করে
কখন তুলবে চিতায় !
আঁধার ঘনিয়ে আসে
নিবারণের চোখে মুখে বেদনার দাবান
পাঁশুটে হয়ে যায় জীবনের রেলগাড়িটা ,
ধোঁয়া ছাড়ে না, সামনেও বাড়ে না
নিবারণ খাবি খায় মর্গের বারান্দায় ।
—————————–
শ্রাবণের মিষ্টি আকাশ
সাজের বেলায় শ্রাবণের মিষ্টি আকাশ
আলো আধারে মাঝে কতোনা কারুকাজ
সবুজে সবুজে প্রকৃতি পেয়েছে নতুন দিন
আকাশের রংধনুর মতো মন হয়েছে রঙিন
দীঘিতে ভাষে শাপলা শালুক কলমিলতা
তাঁর সাথে সেজেগুজে নীল অপরাজিতা
ঝুম বর্ষায় চমকিত ছিল প্রকৃতি বুখ
বিবাগী মন খুজে ফেরে প্রেয়সীর মুখ
কচি কচি ঘাসের ডগায় ভাসে কতনা ছবি
ছুটি নিয়েছে রবি জীবনের কথা বলে কবি
হিমেল হাওয়া আর জল করে মাখামাখি
কুল কুল ধ্বনি করে ছুটে চলে সময়ের নদী
দূরে নীল পাহারে ঝর্নায় ভাসে কতোনা ছবি
নীল অম্বর আর পাহাড় একেই রথের যাত্রী
বিশাল আকাশে উড়াল দেয় পারিযায়ী পাখি
আঙ্গিনায় মিষ্টি গোধূলী দিনমনির হয় সমপ্তি
অতুল বৈভরে বাদল মেয়ে বাজায় নূপুর
কষ্টের মাঝে চিত্তে বাজে যেন বর্ণীল সুর
আলোকিত/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here