শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দালাল বিহীন

0
242

প্রতিনিধি,শরীয়তপুর:

শরীয়তপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে পাসপোর্ট অফিস। অফিস কর্তৃপক্ষ দালালদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট চালিয়ে দালাল চক্রের অপতৎপরতা বন্ধের ঘোষণা দেন অফিসটির সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেন।
একই সাথে দালালদের সাথে অফিসের কারো যোগসাজশ নেই এবং কারো মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোন প্রকার ঘুষ গ্রহণ করা হয়না বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে ৬ই সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার  পাসপোর্ট করতে আসা আবেদনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহকদের কোন প্রকার হয়রানি বা তাদের ফরম ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ফরমে ভুলত্রুটি থাকলে সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলা হয়।
আংগারিয় ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল বলেন, আমি শুনেছি পাসপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া ফাইল জমা নেয় না। ভুলভ্রান্তি ধরে তা ফেরত দেয়া হয়। বিষয়টি শুনে আমি এক রাজনৈতিক বড় ভাইকে ফোন দিয়ে আমার পাসপোর্টের বিষয়টি তদবির করতে বলি। তিনি আমাকে জানান পাসপোর্ট অফিসে কারও তদবিরে কাজ হবে না। কাগজপত্র ঠিক থাকলে এমনিতেই হয়ে যাবে। পরে আমি পাসপোর্ট ফরম জমা কাউন্টারে নিয়ে গেলে নির্ভুল থাকায় আমার টা জমা নিয়ে ফিঙ্গার করতে পাঠায়। আমি দালাল ছাড়াই পাসপোর্ট করেছি। কোর্ট চত্বরে দালালের ছড়াছড়ি কারও কাছে কিছু জানতে চাইলে তারা নেগেটিভ কথা বলে।
জাজিরা উপজেলার নাওডোবা  থেকে পাসপোর্ট করতে আসা মিরাজ মাঝি বলেন, আমি নিজে পাসপোর্ট করতে এসেছি। আমি শুধুমাত্র সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিয়েছি পাসপোর্ট অফিসে ফরম জমা দিয়েছি। আমার বাড়তি কোন টাকা লাগেনি। আমি দালালের সহায়তাও নেইনি। আমার কাগজপত্র ঠিক ছিল তাই আমাকে কোন প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়নি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলীয়া এলাকা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা এমারাত হোসেন বলেন, আমি কোন দালালের কাছে যাইনি। আমি নিজে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে অনলাইনে ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট অফিসে ফরম জমা দিয়েছি। অফিস ফরম জমা নিয়ে আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং ছবি তুলে রেখে স্লিপ দিয়েছে। আমি কোন রকম হয়রানির শিকার হইনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সভাপতি এড্যাঃ রাশেদুল হাসান মাছুম বলেন, নিজেরা সচেতন না হলে কোন দিনও প্রতিকার হবে না,, যারা পাসপোর্ট করতে আসে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ  মানুষেই এখনো জানেনা কিভাবে একটা ফরম পুরন করতে হয়। তারা চেস্টা ও করে না। এখন অনলাইনে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়, তারপরও আমরাই এর ওর পিছনে ঘুরি,আর হাতে পায়ে ধরি, যে কোন একটা অফিসে গিয়ে নিজের কাজ নিজে করতে একজন সচেতন মানুষও দ্বায়িত্ব এড়িয়ে যায়। তিনি আরও বলেন,এই দালালদের তো আমরাই সৃষ্টি করেছি।
কোন অফিসে যখন কোন ফাইল বা কাগজ ফিরিয়ে দেয়, আমরা হতাশ হয়ে ফিরে আসি। তারা কত বার ফিরিয়ে দিবে? আমাদের ধৈর্য নেই। তাই তখন দালাল কে খুঁজি। তখন যদি জবাবদিহি করা হতো, বা কেন কি সমস্যা এই প্রশ্ন করে নিজের ভুল নিজে জানতে চাইতো, এবং সঠিক উত্তর দিতে পারতো তা হলে আজ আমাদের এই দিন দেখতে হতো না। আরে ভাই বহুত শিক্ষিত মানুষ এসে বলে যেভাবেই হোক আমার কাজ টা করে দেন। কেন?
সাদ্দাম হোসেন  বলেন, কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হয়েছে যে, দালালদের মাধ্যমে অফিসে ঘুষ না দিলে গ্রাহকদের ফরম জমা নেওয়া হয়না। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারো ফরমে ভুলত্রুটি থাকলে তাদের ফরম সংশোধন করে আনতে বলা হয়। এছাড়া কারো ফরমই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। পাসপোর্ট অফিস ও সামনের সড়ক সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়।
দালালরা পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশে ঘেষতে পারে না। অফিসের গেইটে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। পাসপোর্ট আবেদনকারী ছাড়া অফিসে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। দালাল চক্র অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা গ্রাহকদের ভুল বোঝাচ্ছে যে, অফিসে টাকা না দিলে ফরম জমা নেওয়া হয় না। দালালদের বিষয়ে গ্রাহকদের সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেন।
একই সাথে তিনি দালালদের অপতৎপরতা বন্ধে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে বলে জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here