শেষ সম্বল বিক্রি করে সৌদি আরব গমন, অবশেষে মৃত্যু ! অর্থের অভাবে আসছে না মরদেহ

0
375

প্রতিনিধি,পাথরঘাটা: 

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়ন বাদুরতলা গ্রামের মৃত  মোঃ আবুল হোসেন এর বড় ছেলে মোঃ জাকির হোসেন (৪৫)

গত আগস্ট মাসের ২৯ তারিখ  পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে যান  সেখানে গিয়ে একটি হোটেলের কাজে যোগ দেন তিনি। কিন্তু এর তিন দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকির। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদির স্থানীয়  সময় বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে  তার মৃত্যু হয়।  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী ইউনুস মুন্সী।

এদিকে জাকিরের মৃত্যুর খবরে তাঁর পরিবারে ও এলাকায়  চলছে মাতম। নিজের ক্ষতির বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন  মা জয়নব বিবির। তিনি কেঁদে বলছিলেন  আমার কলিজার টুকরা পোলাডারে আমার কোলে আইন্না দেন, আমারে শান্তি দেওয়ার জন্য আমার পোলাডা সবকিছু বেইচ্চা বিদেশে গেছে। ও আল্লাহ এ কেমন পরীক্ষা তোমার। ছয় মাস আগে স্বামী আর এখন পোলাডারেও লইয়া গেলা!’

এ আর্তনাদ স্বামী সন্তান হারানো পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা এলাকার জয়নব বিবির (৪৫), ‘এত শোক তুমি দেও কেমনে? জমিজমা সবকিছু বেইচ্চা পোলাডা বিদেশ গেছে। এহন জমিজমাও শ্যাষ আর পোলাডাও শ্যাষ। এহন আমি কি নিয়ে বাচমু! আমার পোলার কবরডা আমার চোখের সামনে দিতে চাই।’ এলাকা  থেকে জানা যায়, ভিটাবাড়িসহ  শেষ সম্বল টুকু  জমি বিক্রি করে জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পারি জমিয়েছিলেন জাকির হোসেন মুন্সী।

পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী ইউনুস মুন্সী আলোকিত প্রতিদিনকে জানান, ‘জাকির হোসেন দালালের মাধ্যমে  তাঁর ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ভিসায় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ করছিলেন নিকট আত্মীয়রা। তিনি তাঁর বাড়ির সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে সৌদি এসেছিলেন  জাকির হোসেন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে ব্রেন স্ট্রোক করেছেন বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে  সৌদি থেকে জানান ইউনুস মুন্সী। ইউনুস মুন্সী আরও জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে জাকির হোসেনকে আল কাসিম সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাঁর মরদেহ মর্গে রয়েছে।

মৃত জাকির হোসেনের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, ‘টানাটানির সংসার থেকে একটু ভালোর আশায় ভাগ্য ফেরাতে বাড়ির জমিজমা বিক্রি করে ধার–দেনা করে বিদেশে পাঠাইছি। আমি শাশুড়ির ঘরে আছি সে ঘর ও ভাঙ্গাচুরা  এবং সে নিজেও  অসুস্থ। এখন তিনটা ছেলে – মেয়ে নিয়ে কেমনে বাচমু কিছুই বুঝতে পারছি না।’  এ বিষয়ে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, জাকির হোসেনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন তা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাঁর মরদেহ ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এদিকে  মৃত জাকির মুন্সীর বাবা গত ছয় মাস আগে তেতুল গাছ থেকে পড়ে ইন্তেকাল করেন, এক শোক যেতে না যেতে আরেক শোক হাজির! এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ সেপ্টেম্বর ,২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here