মো. আহসানুল ইসলাম আমিন :
বেদে সম্প্রদায় বাংলাদেশের একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। আগে তারা নৌকায় করে বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করেলেও। বর্তমানে তার ভিন্ন চিত্র। প্রায় যুগের পর যুগ ধরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রয়েছে তাদের বসবাস। এই বেদে সম্প্রদায়র মাঝে আবার অনেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটার। গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি-ফিতা ফেরি করে বিক্রি আর নদীতে মাছ ধরে কোনো রকমে চলছে বেদে পল্লীর বেদেদের জীবন। বেদে সম্প্রদায়ের জন্ম, বিয়ে এবং সকলের শেষ ঠিকানা যেখানে ওদেরও শেষ ঠিকানা সেখানে, মূলত স্থায়ী আবাসনের অভাবে বেদে সন্তানদের পড়ালেখার তেমন কোনো সুযোগ নেই। বাংলা ছবির কালজয়ী গান “ জলে ভাসা পদ্ম আমি, পেলাম শুধু ছলনা এই গানের মতো বেদে পল্লীর বেদেদের জীবন ” বেদে পল্লীর বেদেদের অনেকের আছে ভোটাধিকার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করে আসছেন। তবে তাদের ভোটাধিকার দেয়া হলেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বেদে পল্লীর বেদেরা। সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৮টি ইউনিয়নেই রয়েছে বেদেদের বসবাস। উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের তালতলা বাজারের দক্ষিণ পাশে সরকারি ডাক বাংলোর সংগ্লন ইছামতি নদীর তীর ঘেষে বেদে পল্লী বা বাইদ্যা পট্টি অবস্থিত। প্রায় ৪০/৫০ টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠা এই পল্লীতে বসবাস করে চার শতাধিক বেদে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তারা এই এলাকায় প্রায় শত বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছে। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বেদে পল্লীতে নাগরিক অধিকার আছে, নেই নাগরিক সুবিধা শিরনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে পরবর্তীতে ভূমিহীন ও গৃহহীন ভাসমান বেদে পরিবারের তালিকা তৈরী করা হয়।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম তানভীর জানান , উপজেলার শেখর নগর ইউনিয়নের শেখর নগর বাজার সংগ্লন ইছামতী শাখা নদীর তীর ঘেঁষা আশ্রায়ন প্রকল্পটি বেদেদের জন্য নির্ধারণ করা হয়ছে। ওই সময়ে বেদেদের যে তালিকা করা হয়েছিল সেই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে ১৫টি বেদে পরিবারকে শেখরনগর আশ্রায়ন প্রকল্পে পুর্নবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বেদেদের জন্যে ঘর নির্মাণধীন আছে । যত দ্রুত সম্ভব ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৫ বেদে পরিবারকে তাদের স্থায়ী ঠিকানা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিব বর্ষের উপহার জমি সহ ঘর তাদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। উপজেলা উপঃ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আইমিন সুলতানা জানান, চলতি বছরের শুরুতে শেখর নগর আশ্রায়ন প্রকল্পে ১৫টি ঘর নির্মান কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে ঘর নির্মান কাজ শেষ পর্যায়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যায় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ।
এবিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন বেদে সম্প্রদায়ের তালিকা করেছে। জলাধারের সঙ্গে বেদেদের জীবনযাপনের যে ঐতিহ্য ঘর বানানোর জন্য সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশর কথা ভেবে উপজেলার শেখর নগর ইউনিয়নের আশ্রায়ন প্রকল্পটি পুরোটা বেদের পুর্নবাসনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৫টি বেদে পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিব বর্ষের ঘর ও জমি প্রদান করা হবে। পর্যায়ক্রমে তালিকাকৃত বাকী বেদেদেরকেও প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমি সহ ঘর প্রদান করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৭ সেপ্টেম্বর ,২০২২/ মওম