আহসান হাবীব:
নওগাঁর রাণীনগরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহতম ধর্মীয় উৎসব লক্ষীপূজা উপলক্ষে উপজেলার কুজাইল বাজারে আবহমান বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দুই দিনব্যাপী মেলার আজ ২য় দিন। শারদীয় দূর্গাপূজার ৫ দিন পর কোন প্রকার ঢাক-ঢোল ও প্রচারণা ছাড়াই বিভিন্ন রকমারি সামগ্রী নিয়ে শত শত দোকানী এসে এই মেলায় বিক্রয়ের জন্য বসেছে।মেলা শুরুর ২/৩ দিন আগে থেকে ফার্নিচার, কসমেটিক, মিষ্টি, খেলনা সামগ্রীর দোকানসহ শিশুদের চিত্র বিনোদনের জন্য আকর্ষনীয় নাগরদোলা মেলায় এসে স্থান দখল করে নিয়েছে। নানা ধরনের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতির কারণে কুজাইল ফুটবল মাঠে জাগরণ সংসদ মেলা পরিচালনা কমিটিরা দোকানিদের জায়গা করে দিতে হিমশিম খাচ্ছে। নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত কুজাইল মেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের হওয়ায় ৯০ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দারা জম্মের ইতিহাস বলতে পারে না।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান ছিলো কাশিমপুর রাজবাড়ী। কথিত আসে এখানকার রাজার শাসন আমলে রাজবাড়রি আশপাশের এলাকা আতাইকুলা, কৌনজ, মিরাট, কাশিমপুর, বেতগাড়ী, ত্রিমোহনী, শৈলগাছীসহ বেশকিছু এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের লক্ষীপূজা উপলক্ষে রাজার প্রত্যক্ষ নির্দেশে কুজাইল বাজারের গাঁ-ঘেষে বয়ে যাওয়া নওগাঁ ছোট যমুনা নদীতে দুই দিন ব্যাপী নৌকায় লক্ষী প্রতিমা নিয়ে ঢাঁকের তালে তালে সিঁদুর ছিটিয়ে ধুপের ধোঁয়ায় নেচে গিয়ে উৎসব মুখোর পরিবেশে গোধুলী লগ্নে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যেত। সেই রেশ ধরেই লক্ষীপূজা এলেই ঐতিহ্যবাহী এই পূজার মেলা জমজমাট ভাবে হয়ে আসছে। মেলা উপলক্ষে বাজারের আশপাশে হিন্দু-মুসলমানদের বাড়িতে জামাই-মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনদের আনা নেয়া বেরে যায়। এমনও প্রবাদ আছে এখানকার জামাই-মেয়ে লক্ষীপূজার মেলায় না নিয়ে আসলে স্বজনদের মধ্যে কেমন যেন আত্মীয়তার কমতি দেখা দেয়। একে অন্যের বাড়িতে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য তিল ও নারিকেলের নাড়ু বেশ প্রচলিত আছে।মেলা উপলক্ষে কয়েক বছর আগেও আতাইকুলা পাল পাড়ার রঘুসাহা’র বাড়িতে ৭দিন ব্যাপী যাত্র পালাসহ গান-গীত রাতভর অনুষ্ঠিত হত। এই মেলায় কাঠের আসবাবপত্র, কসমেটিকস সামগ্রী, বড় বড় মাছ, বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের মিষ্টি, জিলাপী, মাটির তৈজসপত্র, স্টীল সামগ্রীসহ মেলায় আসা বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রচুর পরিমানে বেচাকেনা হওয়ায় দোকানীরা এই মেলার আকর্ষন ছাড়তে পারে না।উপজেলার কুজাইল গ্রামের আহম্মদ আলী (৮৩) জানান, কাশিমপুর রাজার আমলে এই মেলাই গান-বাজনাসহ বড় ধরণের ধুমধাম হত। দাদা নানার সাথে এই মেলাই জিলাপী খেতে আসতাম। কাশিমপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যন সাইদুর রহমান বাঘা (৭০) জানান, আমি নিজেই বাব-দাদার আমল থেকে এই মেলা দেখে আসছি এবং প্রায় এক যুগ ধরে কুজাইল জাগরণ সংসদের সভাপতি থাকাকালিন লক্ষীপূজার মেলার পরিষদের দায়িত্ব পালন করছি।রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, কুজাইল মেলা পরিচালনা কমিটি থেকে জানানো হয়েছে।সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১১অক্টোবর ,২০২২/ মওম