মাসফি আকন্দ:
ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে একটি বিদ্যালয়। যার নাম জামালপুর জিলা স্কুল। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্কুল এটি। তৎকালীন জামালপুর মহকুমা প্রশাসক টি এ ডনো (১৮৬৮-১৮৮২) নিজ বাসভবনে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি পাঠশালা খোলেন। ওই পাঠশালাকে বলা হতো ‘ডনো সাহেবের পাঠশালা’। কয়েক বছরের মধ্যে পাঠশালাটি মাইনর স্কুলে পরিণত হয়। ১৮৮১ সালে মাইনর স্কুলটিকে এন্ট্রান্স স্কুলে উন্নীত করে নামকরণ করা হয় ‘ডনো হাই স্কুল’। ১৮৮২ সালে স্যার রিচার্ড টেম্পল স্কুলটিকে সরকারি সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ সময় নামকরণ করা হয় ‘জামালপুর ডনো ইংলিশ হাই স্কুল’। ১৯১২ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয় এবং স্কুলের নাম হয় ‘জামালপুর সরকারি বিদ্যালয়’। ১৯৭৯ সালে জামালপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ‘জামালপুর জিলা স্কুল’ হিসেবে এর নতুন নামকরণ হয়। স্কুলের দু’টি প্রাচীন হোস্টেলের মধ্যে হিন্দু ছাত্রদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হিন্দু বোর্ডিং এখন আর নেই। পরবর্তীকালে এতে জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরটি ১৯০৮ সালে মুসলিম ছাত্রদের জন্য তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এফ এ সাক্সি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘সাক্সি মোহমেডান হোস্টেল’ এখনও চালু রয়েছে।
বিদ্যালয়টি মোট ১২.০৭ একর জমির উপর মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। মোট ১৩টি স্থাপনা সম্বলিত এই বিদ্যালয়ে রয়েছে ত্রিতল ৩টি একাডেমিক ভবন, দ্বিতল ১টি ও একতলা ২টি, ছাত্রাবাস দ্বিতল ১টি, পাকা মসজিদ ১টি ও পুকুর ১টি।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৫১ এবং মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৪। বিদ্যালয়ে ২টি কম্পিউটার ল্যাবরেটরিসহ মোট ৫টি ল্যাবরেটরি এবং একটি পাঠাগার রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে সহপাঠ কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, আন্তঃকক্ষ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং স্কাউটিং, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্ট কর্মসূচি।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের প্রথম স্পিকার আব্দুল করিম, সাবেক প্রাদেশিক খাদ্য ও মৎস্য মন্ত্রী গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের চিফ হুইপ খান বাহাদুর ফজলুর রহমান, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পিডব্লিউডি প্রধান মনিষ চন্দ্র দত্ত, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শফি সামী, প্রাক্তন সচিব মতিউল ইসলাম ও ড. এ কে এম গোলাম রববানী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর নুরুল ইসলাম, প্রাক্তন বিভাগীয় কমিশনার আবু তাহা মিয়া, এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি আনিসুল হক, প্রাক্তন এমপিএ অ্যাডভোকেট হায়দার আলী মল্লিক, প্রাক্তন এমএনএ আব্দুল হামিদ, প্রাক্তন এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম, সংগীতজ্ঞ মরহুম ওস্তাদ ফজলুল হক, অভিনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাজনীতিবিদ মীর্জা সুলতান রাজা প্রমুখ জামালপুর জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
১৯১২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ৩৯ জন শিক্ষাবিদ এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন শশাঙ্ক শেখর ভট্টাচার্য্য (১৯১২-১৯২৪)।
১৯৯০ সাল থেকে জামালপুর জিলা স্কুলে প্রভাতি ও দিবা দুইটি শাখায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রভাতী শাখা সকাল ৭ টা ১৫ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট ও দিবা শাখায় ১১ টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
জামালপুর জিলা স্কুলের দিবা শাখার দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার নাফিস বলেন-আমি জামালপুর জিলা স্কুলের ছাত্রের জন্য গর্ববোধ করি। কোনো জায়গায় পরিচয় দিতে ভালো লাগে। এখানে আমরা সবাই মিলে লেখাপড়া করি। আমাদের আরেকটি পরিবার হলো জামালপুর জিলা স্কুল।
অভিভাবক মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, আমার ছেলে জিলা স্কুলে লেখাপড়া করছে। এই স্কুলে একবার ভর্তি হলে আর কোনো চিন্তা নেই। প্রতিটি ছেলেই এখান থেকে স্বশিক্ষিত হয়ে বের হয়ে আসে। জিলা স্কুলের প্রতিটি শিক্ষক তাদের ছাত্রদের খুব যত্ন সহকারে পড়ান। এর ফলে প্রতিটি ছাত্র পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে
জামালপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হালিমা খাতুন বলেন, আমাদের জিলা স্কুলের দুই শাখায় বর্তমানে ১৬১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও আমাদের শিক্ষক রয়েছে ৫১ জন এবং কর্মচারী রয়েছে ৪জন। সব মিলিয়ে আমরা এখন পরিপূর্ণ।
প্রধান শিক্ষক বলেন, এ জেলার প্রতিটি মানুষ আমাদের জিলা স্কুলের প্রতি আন্তরিক। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিয়মিত জামালপুর জিলা স্কুলের খোঁজখবর রাখেন। আমরা কোনো সমস্যায় পড়লে সকলে মিলে সেই সমস্যা সমাধান করি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ অক্টোবর-২০২২/ মওম