নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জে গতো ১ বছরে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হকের নেতৃত্বে একের পর এক সফল অভিযানের মাধ্যমে ১৭০০ ঘনফুট গর্জন, সেগুন,বিবিধ প্রজাতির গোল এবং চিরাই কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। বনের গাছ নিধন ও পাচার রোধ, জবর দখল উচ্ছেদ, বনের জমি পুনরুদ্ধার এবং বালু এবং পাহাড়ে মাটি খেকোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানে ধরাশায়ী হয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য অন্যতম প্রধান হচ্ছে গাছ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য এই বৃক্ষকে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে।
বন, পরিবেশ এবং প্রকৃতি বাঁচাতে ‘সামাজিক আন্দোলনে’ পরিণত করতে চাই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “আসুন বৃক্ষকে বাঁচাই, পাহাড়, বন, বালু ও মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা ‘নতুন যুদ্ধ’ শুরু করি। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য, পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি।
এদিকে, বালু ও পাহাড় খেকোদের প্রতিরোধ এবং বনভুমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানে বনবিভাগ হার্ডলাইনে রয়েছে। এতে নাখোশ বন এবং পরিবেশ ধ্বংসকারী দুষ্কৃতকারী চক্র। এসব অপরাধী চক্র একাট্টা হয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক অপপ্রচার করে এবং বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে । এরপেছনে কয়েকটি অসাধু চক্র, গডফাদারের পাশাপাশি কিছু অসাধু ব্যক্তিও নেপথ্যে জড়িত রয়েছে বলে সুত্রে প্রকাশ।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক যোগদানের পর গত এক বছরে বনভূমি দখল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে ৫৫ টি। অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৭০ একর বন ভুমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বনভুমিতে নতুন করে বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। অভিযানের পর বনভুমিতে নতুন কোন ঘরবাড়ি, স্থাপনা নির্মাণ কিংবা জায়গা দখল হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যক্রমকে রুদ্ধ করার জন্য কাঠ পাচারকারী ,বালু এবং পাহাড়খেকো সিন্ডিকেট নামে বেনামে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার জন্য নতুন মিশনে নেমেছে। মূলত স্বার্থন্বেষী মহল তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক বলেন, দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষিত বনভূমি অবৈধ ভাবে দখল করে যারা ঘরবাড়ি, স্থাপনা তৈরি করেছে জবরদখলকারীরা বনভুমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে সকল বনভূমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। বনায়নে কোন ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সেদিকে কড়া নজরদারী রয়েছে। এতে করে বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে সৃজিত বনায়নে দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। পুরো বারবাকিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন সকল ষড়যন্ত্র কে মোকাবিলা করে সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পাহাড় খেকো,বালিখেকো,কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায় , সংঘবদ্ধ পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট সদস্যরা বনাঞ্চলের ভিতরে ছরা ও খালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন শত শত ঘনফুট উত্তোলনকৃত বালু মজুদ করে। ট্রাক এবং ডাম্পার ভর্তি করে ওই বালু বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। বিভিন্ন খালে ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে গত এক বছরে বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। এসময় বিপুল পরিমাণ পাইপ ১ থেকে ৫ হাজার ঘন ফুট বালু জব্দ করা হয়।
১৪টি যানবাহন জব্দ করা হয়। বন এবং পরিবেশ বিরোধী ঘটনায় গত এক বছরে ৫৫ টি বন মামলা, ৩ টি পুলিশ মামলা (এফআইআর) দায়ের করা হয়েছে। সুত্রে আরও জানা গেছে,বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৭০০ ঘনফুট গর্জন,সেগুনসহ বিবিধ প্রজাতির গোল ও চিরাই কাঠ জব্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে আমরা সজাগ এবং সতর্ক রয়েছি। কাঠ পাচারকারী, বালু এবং পাহাড়খেকো সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন অপরাধ দমনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৮ অক্টোবর-২০২২/ মওম