চৌহালীতে  ইঁদুরের গর্তে ধান, এ যেন অন্য প্রাণ 

0
298
হাসিনুল ইসলাম অনিক
উপজেলা জুড়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝঁড়ে পড়া ধান কুঁড়ানো ও ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করার কাজে ব্যস্ত শিশু-কিশোর ও হতদরিদ্র পরিবারের নানা বয়সী মানুষ। সরজমিনে জানা গেছে, যাদের নিজস্ব জমি নেই কিংবা কোন জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেননি তারাই এসব ধান কুঁড়িয়ে তাদের শখ বা আশা পুরণ করে থাকেন। চলতি আমন মৌসুমে ধান কাঁটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় তাদেরও উৎসব হয়েছে শুরু । কোথাও কৃষক তার ধান কেঁটে নেয়ার পর ফসলের মাঠ জুড়ে পড়ে রয়েছে ধান গাছের গোড়ালী যা স্থানীয় ভাষায় নাড়া বলা হয়।
গোড়ালির ফাঁক দিয়ে রয়েছে ঝড়ে পড়া সোনালী ধান। কীট-পতঙ্গের আক্রমণে অনেক ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে মাটিতে পড়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বউ-ঝি এবং ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে সেই ধান কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ হাতে ডালি, চাইলন/চালুন, কারো হাতে বাশিলা, ঝাটা আবার কেউ হাতে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়েছেন। অনেকের কাঁধে কোঁদাল আর কারো হাতে শাবল রয়েছে। ছোট ছোট ছেলেদের দৃষ্টি কেবল গর্তে, নাড়ার ফাঁক দিয়ে মাটির দিকে ইঁদুরের কেঁটে নিয়ে যাওয়া ধান। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝড়ে পড়া ধান দেখলেই ওদের চোখে-মুখে সোনালী হাসি ফুটে ওঠে। ইঁদুর কৃষকের ক্ষেত থেকে ধানের শীষ কেঁটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে মাটির নিচে গর্তে মজুদ করে। ধান কুঁড়ানিরা সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে নেয়।
এছাড়া মাটি থেকে একটি একটি করে ধান কুঁড়িয়ে ডালায় ভরে তারা। মৌসুমের পুরো সময়টায় তারা এভাবেই ধান কুঁড়াচ্ছে অনেকে। এ সময়টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, গ্রাম বাংলার হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধরা। তারা  প্রত্যেকে দৈনিক ৪/৫কেজি করে ধান সংগ্রহ করছেন।উপজেলার উমারপুর গ্রামের আছিরণ (৫৬) জানান, “এখন তো ছেলেরা আমাদের দেখে না। তা কি করুম এই ধান কুড়িয়া যে কয় দিন যায় সেই ভাল। বাকী পুরো বছরে চাল কিনে ভাত খাই। মুই গরীব মানুষ। দিনে  ৮-৯ সের ধান পাও।” এরপরেও এখন পিঠা খাবার শখ হয়, ধান পামো কোনঠে। তাই এই সময় আসলে ধান খুঁটি। তারাই শুধু ধান খুঁটেন তা নয়, উনার মতো অন্য ধান কুঁড়ানি ছোট-ছোট ছেলে মেয়েরা একই কথা জানান। আবার অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করার জন্য ও ধান খুঁটে থাকেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here