খুলনার কয়রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে ঝরে পড়েছে শিক্ষার্থীরা

0
235

প্রতিনিধি,কয়রা(খুলনা):

খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় এলাকার শিক্ষার্থীরা দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করছে। যার ফলে গ্রামের অনেক শিশু কিশোর শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সারেজমিন দেখা যায়, দূরবর্তী বিদ্যালয় হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। দক্ষিণ বেদকাশীর, পাতাখালি গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। অথচ গ্রামে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা ভূমি এবং দান করেছিলেন।
এরপর স্থানীয় লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতার জন্য বারবার ধরনা দেন। তারা কেবল শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। বাস্তবে তাদের কাজ কিছুই হয়নি। গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে। দূরবর্তী বিদ্যালয় হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনীহা বাড়তে শুরু করছে। দিনের পর দিন এতে অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি ওই এলাকার লোকজন এবং শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় পুনঃনির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে, ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান,১৯৯৬ সালে পাতাখালি গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ৩৩ শতক জমি দান করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতাই সেখানে কোন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূরবর্তী দক্ষিণ বেদকাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চোরা মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে।
পাতাখালি গ্রামের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মিম জানায়, গ্রামে কোন বিদ্যালয় না থাকায় তারা কষ্ট করে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় অনেক সহপাঠী দূরের স্কুলে যায় না। অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় চাই। লেখাপড়া শিখে আমরা বড় হতে চাই।
জমিদাতা হায়দার মল্লিক ও ইয়াকুব মল্লিক বলেন, বয়স অনেক হলো বৃদ্ধ হয়ে গেছি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নিজের জায়গা জমি কম তারপরও এক বিঘা জমি দান করছি। অনেক মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। কাজের কাজ কিছু হয়নি। মৃত্যুর আগে আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখতে চাই।
এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নান মল্লিক বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানোর জন্য আমরা একটি বিদ্যালয় চালু করেছিলাম। সেখানে ৬৫ জন শিক্ষার্থী ও ছিল কিন্তু সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বিদ্যালয়টি ঠিকমতো চলছে না।
গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমার সন্তান সহ গ্রামের অনেক শিশু কিশোর দূরে কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। অনেকে ঝরে পড়েছে। শিক্ষার অভাবে শিশু কিশোর ও যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে।পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন করে সুশিক্ষা গ্রহণ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবে এলাকায় শিশু কিশোররা।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পাতাখালি গ্রামে একটি বিদ্যালয়ের প্রয়োজন। একটি প্রকল্পের আওতায় অনেক আগে একটা কমিউনিটি স্কুল ছিল,। সেই প্রকল্পটি এখন বন্ধ আছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন ,বিষয়টি আমি জেনেছি। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অতি দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অবহিত করব।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ নভেম্বর-২০২২/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here