বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়লো আর্জেন্টিনা

0
225

ক্রীড়া ডেস্ক:

গঞ্জালো মন্তিয়েলের শট জালে জড়াতেই দু’হাত মুঠো করে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লেন লিওনেল মেসি। ধরা দিলো অধরা বিশ্বকাপ। আবেগে ভাসলেন, চিকচিক করে উঠলো জাদুকরের চোখের দুই কোণ। গ্যালারি থেকে নেমে এলেন সের্হিও আগুয়েরোও। গায়ে ওটামেন্ডির ১৯ নম্বর জার্সি। গলায় ঝোলানো ড্রাম। ২০১৪ সালের ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সাবেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের। দলের বিশ্বজয়ের শরিক হয়ে উঠলেন তিনিও।

এই জয় কি শুধু আর্জেন্টিনার, । ২০ বছর ধরে বিশ্বকাপে আধিপত্য ইউরোপের। বলাবলি হচ্ছিল ফুটবলে কি লাতিন যুগ এখন সুদূর ইতিহাস। এই কিছুদিন আগে এমবাপ্পে নিজেও লাতিন ফুটবলকে পিছিয়ে রেখে করেছিলেন বিতর্কিত মন্তব্য। তবু ফুটবলে একসময় কর্তৃত্ব করা লাতিন অঞ্চল এমবাপ্পের কথা মানবে কেন? তারা এটাকে ‘অপমান’ হিসেবে নিয়েছে। গত মার্চে এমবাপ্পের মন্তব্য নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন লিভারপুলে খেলা ব্রাজিলের ফাবিনহো। এপ্রিলে লওতারো মার্টিনেজ ওই মন্তব্য নিয়ে পাল্টা জবাবও দিয়েছেন। শনিবার কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে এমবাপ্পের এক হাত নিয়েছেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।দোহার সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হয়। প্যারিসের ঘড়ি বলছে বিকাল ৪টা, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, দক্ষিণ গোলার্ধে আর্জেন্টিনায় বুয়েনস আয়রেসে তখন সূর্য মধ্যগগণে, দুপুর ১২টা। প্রথমার্ধ জুড়ে ফরাসি সূর্যকেও সেরকম বিকেলের ঢলে পড়া নিস্তেজ দেখালো। মাত্র ২৩ মিনিটেই বক্সের ভেতরে ডেম্বেলের ঠেলায় পড়ে গিয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেন ডি মারিয়া।  নতুন এন্ট্রির পাতা খুলে দেন মেসি।

মেসি

৩৬ মিনিটের মাথায়, ঝড়ের বেগে আক্রমণে উঠে চোখ জুড়োনো গোল করে আসেন ডি মারিয়া। স্কোরবোর্ড বলছে, জয় প্রায় সুনিশ্চিত! আর্জেন্টিনা ২–০ ফ্রান্স! উল্লাসের জন্য লাইনের ধারে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন ডি মারিয়া! খেলা প্রায় এক পেশে হয়ে গিয়েছে। কার্যত আর্জেন্টিনার আক্রমণ সামলাতে খড়কুটো আঁকড়ে ডিফেন্স করে চলেছে ফ্রান্স। ৬২ মিনিট অবধি ৯টা গোলে অ্যাটেম্পট রেখেছে আর্জেন্টিনা, ৫টা অন-টার্গেট।  কিন্তু তখনও নাটকের আসল অধ্যায়টাই বাকি! ৮০ মিনিটে প্রথম ‘অ্যাকশন’। কোলো মুয়ানি বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন বল নিয়ে, তাকে বাধা দিতে গেলেন ওটামেন্ডি। সেখানেই ফাউল হয়ে গেলো। ফ্রান্সের পেলান্টি। পেনাল্টি থেকেই প্রথম ক্লাইম্যাক্সের ফিতে কাটলেন এমবাপ্পে। এরপর কোন জাদুমন্ত্র বলে হঠাৎ ফরাসি বিপ্লব। এতক্ষণ ম্রিয়মান ফরাসি দলই যেন কামানের গোলার মত জ্বলে উঠলো। শুরু হলো দুই প্রান্ত দিয়ে একের পর এক সাঁড়াশি আক্রমণ। মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই তাৎক্ষণিক কাউন্টার অ্যাটাকে দুরন্ত শটে জালে পাঠালেন সেই এমবাপ্পে।

স্টেডিয়ামে তখন উত্তেজনার তুঙ্গে । খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। ১০৮ মিনিটে সেই আদি, অকৃত্রিম, অনুকরণীয় মেসি ম্যাজিক। আবার আর্জেন্টিনা সমর্থকদের গর্জন, নীল সাদা সুনামি। ১১৮ মিনিট, খেলা শেষ হবার কয়েক মিনিট আগে, আবার পেনাল্টি। আবারও এমবাপ্পে, এবং হ্যাটট্রিক। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক! মাত্র ২৩ বছর বয়সে। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। নায়ক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

এই বিশ্বকাপ লোকে মনে রাখবে, ফুটবল-ঈশ্বরের আপন মহিমার বিশ্বকাপ। ঔপনিবেশিক দুঃশাসনে শোষিত-নিষ্পেষিত, মঙ্গা পীড়িত লাতিন জনপদের মানুষের চোখে উজ্জ্বলতা এনে দিয়েছিল ফুটবল। সেই উজ্জ্বলতা যারা শেষ দেখে ফেলেছিলেন মোক্ষম জবাব পেলেন তারা।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ ডিসেম্বর– ২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here