কবি সৈয়দ রনো’র পত্রকাব্য

0
518

আলোকিত সাহিত্য :

                                                                           খোলা চিঠি

                                                                           সৈয়দ রনো

 

প্রিয়ন্তীকা
নির্লজ্জ সময়ের শুভেচ্ছা নিও।
জানি, কাদামাটির নরম শরীরে খানিকটা মানিয়ে নিয়েছো। ছাড়পোকার উপদ্রব উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে থাকা জাতিকে জাগাতে পারোনি বলে এতো অভিমান তোমার? তোমার মানবিক কান্না ওদের কর্ণকুহরে পৌঁছায়নি ? সরলতার মানবিক উচ্চারণ নিয়ে ওরা ভাবে না মোটেও। শ্রেষ্ঠ দাবাড়ুর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে রাজনীতির কূটকৌশল মোকাবেলা করা যায় না। মনে রেখো মিসকে শয়তান আর অধিকাংশ রাজনীতিবিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বাস্তবতাকে পাশ কাটাতে পারোনি বলে খানিকটা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, সটকে পড়েছো অন্য জগতে।

প্রিয়ন্তীকা,
একবার এসে দেখে যাও মিথ্যাচার আর পাপাচারে ছেয়ে গেছে এই জনপদ। দিন আর রাত্রির ব্যবধান এখানে নেই। সন্তানহারা মায়ের আহাজারি আর ধর্ষিতা বোনের করুণ আত্মচিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পশুপাখির চেয়ে সস্তায় বিক্রি হয় মানুষের জীবন। আর মূল্যবোধ সে হারিয়েছে অন্ধকার কানাগলিতে।

প্রিয়ন্তীকা,
তোমার দেহের গড়নে অঙ্গের ভূষণে এখনো কি রোদ বৃষ্টি খেলা করে। হেসে লুটোপুটি খায় সূর্যস্নাত দুপুর। আত্মগরিমায় তোমার তুলনায় যে তুমি, তা বসন্ত বাতাসও জানে। আমি জানি তুমি অজানা গন্তব্যে পা ফেল না কোনদিন। কুয়াশার কপালে কালো টিপ পরিয়ে তুমি ঝরাতে জানো শিশির সকাল। দূর্বাঘাসের হাসিতে পুলকিত হয় শুভ্র মেঘ। খুব জানতে ইচ্ছে করে, ফেলে আসা শৈশব কি তোমার মনের দ্রাঘিমায় এখনো উত্তাল ঝড় তুলে। এখনো কি তুমি কৃষ্ণচুড়ার ফুলের পাপড়িতে মুখ লুকিয়ে হাসো? এখনো কি কাঠঠুকরা পাখির মতো ডুকরে ডুকরে কাঁদো?

প্রিয় প্রিয়ন্তীকা
কল্পনার সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে বাস্তবতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ তোমার। জীবন যুদ্ধে বিজয়ের পতাকা তোমার হাতে পত পত করে উড়ছে। তুমি ভয়ের রক্তচক্ষুকে জয় করতে জানো। আর আমি? একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে চোরাবালিতে আটকে পড়া হতাশাগ্রস্ত মানুষ। আমি এখন আর সূচনা সঙ্গীত নই। নই রোমান্টিক গানের মনকাড়া সুর। আমি হলাম বিরহের ভৈরবী গান ।
তুমি বিরহে হওনা কাতর। প্রতিপক্ষের চোখের জলে হওনা আবেগ আকুল। শত বাঁধা বিপত্তি উপড়ে ফেলে সামনে চলতে জানো তুমি। আমার মতো বিরহ জ্বালায় হও না কাতর আবার অল্প আনন্দে হওনা আত্মহারা।

প্রিয়ন্তীকা
এই লেখা তুমি পড়বে কি না জানি না। তোমার আমার দূরত্ব এখন আকাশ জমিনের ব্যবধান। বাতাসের গুঞ্জনে শুনেছি আমাকে রাজদণ্ড দেওয়া হবে। এ সময় তুমি পাশে থাকলে ভালোই হতো। তুমি পাশে নেই এতেও বিচলিত নই।
সত্যি বলতে কী মরতে মরতে আমি বাঁচার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি। মৃত্যু আমার সেদিন হয়েছে যে দিন তুমি লানতের তক্তা পরিয়েছিলে আমার গলায়। পাহাড় সমান অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। কোমরের জোর কমে এসেছে অনেকাংশে।

প্রিয়ন্তীকা
তুমি তো জানো, দুঃখের নদে ভাসমান মানুষের কষ্টবোধ থাকতে নেই। অসুখী মানুষের জীবনে আকাশ ফুঁড়ে সুখ এসে আচানক বাসা বাঁধবে এমনটি ভাবতে নেই, তাও জানি। দুঃখের আলখেল্লা পরিয়ে অনেক ত্যক্ত বিরক্ত করেছি বলেই আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। আমি কিন্তু মোটেও অবাক হইনি। তোমার সুশৃঙ্খল সাজানো গুছানো জীবনে আমি ধূমকেতু হতে চাই না।

প্রিয়ন্তীকা
একদিন না একদিন তোমার আমার সুসম্পর্কের পিঠে তুমি কুড়াল চালাবে , সেটা জানতাম। কারণ জল আর তেলের কখনো মিশ্রণ ঘটে না। ঘুমিয়ে থাকা এ জাতির যেমন আজ ঘুম ভেঙেছে তেমন তোমারও একদিন ভুল ভাঙবেই তাও জানি। তোমার অহংকারী মনোজগতে বিচরণ করে তন্নতন্ন করে আমি এক চিলতে ভালোবাসা খুঁজেছি। তুমি কখনোই আত্মসমালোচনা করতে শিখোনি। হারাতে জানো, হারতে শিখোনি তুমি। তুমি জয়ের আনন্দে আনন্দিত হও, কাজেই স্বেচ্ছায় আমি পরাজয় বরণ করে নিলাম। আনন্দ উচ্ছ্বাস হোক তোমার নৃত্য দিনের চলার সাথী। তোমার দেওয়া মিথ্যে অপবাদ হোক, আমার জীবনের শেষ বিরামচিহ্ন।

 

আলোকিত প্রতিদিন // আর.কে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here