শীতের মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মৌচাষিরা

0
201
প্রতিনিধি, জামালপুর: 
জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা এ জেলায় এসেছেন। এবার সরিষার ভালো চাষ হওয়ায় মধু আহরণও ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা।
এ জেলায় স্থানীয়ভাবে তেমন কোন মৌচাষি না থাকলেও সরিষা মৌসুমে টাঙ্গাইল, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের জন্য এ জেলায় আসেন।
জানা যায়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলায় সরিষার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স নিয়ে আসেন। সরিষা ফুল ফোটার সাথেই মৌচাষিরা সরিষা খেতের পাশে সারিসারি মৌমাছির বাক্স বসিয়ে থাকেন। ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের জমা করে মৌমাছিরা। বাক্স থেকে ৮-১০ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা।
মেলান্দহ উপজেলার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ফসলি খেতের পাশে মৌমাছির শত শত বাক্স সারি করে বসিয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে সরিষা ফুলের মাঠ থেকে মধু সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে দেখা যায়, মৌয়ালরা মৌ বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন।
মৌচাষিরা জানান, প্রতিটি বাক্সে ১২-১৩টি মমের সিড দেয়া হয়। সেই সিডে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। একটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি থাকে। একটি রানী মৌমাছি প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর বেঁচে থাকে। তবে পুরুষ ও কর্মী মৌমাছির গড় আয়ু ৬০ দিন। একটি রানী মৌমাছি প্রতিদিন ২২শ থেকে ২৫শ ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার ২১দিন পর মৌমাছির জন্ম হয়। মৌমাছি জন্মের ৬দিন পর থেকে মুধ সংগ্রহের শুরু করে। প্রতি বছর ৫ মাস তারা মধু সংগ্রহ করে। বছরের বাকি ৭ মাস মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে রাখেন বলে জানান তারা।
উপজেলার ঘোষেরপাড়া চর বংশীবেল তৈল এলাকায় মৌমাছির বাক্স বসিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি এলাকার মৌচাষি মো. চাঁন মিয়া। তিনি জানান, এ বছর মৌমাছিতে লাভ হবে না। বাজারে মধুর দাম নেই। বাক্স আনা-নেয়ার খরচ বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় বাড়তি গাড়ি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এছাড়া ৭ মাস মৌমাছিকে চিনি খাওয়ায়ে রাখতে হয়। এখন চিনির দাম বেশি। সরকার যদি মৌচাষিদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমাদের উপকার হতো। তা না হলে মৌমাছি চাষ করা ছেড়ে দিতে হবে। মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব ছবিলাপুর এলাকায় কথা হয় ইনসাফ মৌ খামারের মৌচাষি মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার রবিপুর সরকারপাড়া এলাকা থেকে। তিনি বলেন, সরিষা ফুলের মৌসুমে ৫০ থেকে ৫৫ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবো। আশা করছি সব মিলিয়ে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার মধু বিক্রি করা যাবে। আমরা মধু সরাসরি কোম্পানিতে দিতে পারি না। মধুগুলো আমরা সাতক্ষীরার এক লোকের কাছে বিক্রি করি। তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে মধু বিক্রি করে থাকেন।
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেরার মৌচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, মৌচাষে খরচ অনেক। বছরে ৭ মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছর চিনির দামও বেশি। এবার মধুতে লোকসান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, সরিষা খেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। জেলার ৭টি উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে। এবার মৌয়ালারা নির্বিঘ্নে মধু সংগ্রহ করছে। এখন সরিষা চাষিরা মৌয়ালদের বাঁধা না দিয়ে সহযোগিতা করে। সরিষা চাষিদের এবং মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ এবং উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৭ ডিসেম্বর– ২০২২/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here