শাওন আসগর:
অনেক কবিই আজকাল অতীব স্বাভাবিক পদচারণায় বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন সৈয়দ রনো। তাঁর পরিচয় একজন ছড়াকার, কবি, নাট্যকার অভিনেতাই নয় বরং তাঁর পরিচয় সে নিজেই সম্মানের সাথে উঁচু স্থানে বসিয়েছেন।একজন ভাবুক ছন্নছাড়া কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ নিয়ে চলা মানুষের প্রতিচ্ছবিতে আমরা সাধারণত একজন কবির মূর্তি তালাশ করি কিন্তু বয়সে তরুণ এই কবি নিজেকে অন্যভাবে অন্য রূপের অবগুন্ঠনে সাজিয়ে রেখেছেন। একজন সদা হাস্যজ্জোল সরল বন্ধুবাৎসল্য যুবক যেনো সদা জাগ্রত। তাঁর অভিব্যক্তিতে-কথায়-চলনে এবং তার সাহিত্যর অঙ্গনেও।
কবিতার মাধুর্যে তিনি মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের অধিকার সম্পর্কে এক সজাগ দৃঢ় ম্যাসেজ তুলে ধরেছেন। কোনো হুমকীকে কবি পরোয়া না করে নান্দনিক ভাষায় ‘শাসকের তান্ডব’ কবিতায় তিনি লিখেনঃ
………………………………………………..
দাবি তুললেই জেলে ঢোকায়
দাবি তুললে খুন
গণতন্ত্রের লেবাস গায়ে
এটা কেমন গুণ।
…………………………………………..
‘তাইরে নাইরে নাই’ কবিতায় কবি চরম সাহসে দেশের সাধারণ জনগনের অনুভূতির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এভাবেঃ
……………………………………………………
ভয় দেখিয়ে পার পাবে না
বাড়তি বিলের দাম পাবে না
ন্যায্য হিস্যা চাই
রাঘব বোয়াল তোমরা মিলে
সোনার দেশটা খাচ্ছ গিলে
দেশটা সবার ভাই।
……………………………………………….
এভাবে সৈয়দ রনোর সাহিত্যকে আরো নাড়াচাড়া করলেই দেখা যায় তিনি সাধারণ খেঁটে খাওয়া বা অসহায় মানুষের কথাও নির্ভয়ে প্রকাশ করেন। তাঁর কারফিউ ঘেরা পূর্ণিমা রাত বইয়ের ভেতর দেখিঃ
…………………………………………………….
বাতাসে কান পেতে শুনি’
বাতাসে কান পেতে শুনি
ভিখেরির থালায় রাখা কয়েনের
ঝনাত ঝনাত শব্দ
চিকিৎসালয়ে মুমুর্ষ রোগীর করুণ আর্তনাদ
……………………………………………………………………..
এসব কবিতায় কবির সমাজ সচেতনতা সত্যি উল্লেখ করার মতো। একদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, অগনতান্ত্রিকের বিরুদ্ধে, বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করার বিরুদ্ধে কথা বলে ওঠেন। তখন একটি চিত্রই উদ্ভাসিত হয় চোখের সামনে যে আমার সবাই ঝিঁমিয়ে পড়ছি। কবির মতো সাহসী হয়ে ওঠতে পারছি না। বলছি না ন্যায়পূর্ণ কথা বলছি না অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা। এখানেই কবিকে শ্রদ্ধা না করে পারি না।
যখনন ভাবি সবাই কবি নয়-কেউ কেউ কবি। তখন এই ‘কেউ কেউ কবির’ মধ্যেই সৈয়দ রনোর নাম এসে যায় অনায়াসে। তার কাব্যের যে স্বাপ্নিক ভূবন তাতে কেবল রুখে দাঁড়াবার আহবান শুনি। তাঁর মধ্যে শানধার শব্দ এবং কবিতার সাহসী বাক্যে নিজেকে প্রতিবাদী ও সাহসের দোর গোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তিনি তাই নির্ভয়ে তার লেখায় কবিতায় ও ছড়ায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, বাংলার সবুজ শ্যামল ছায়াকে নিয়ে ব্যর্থতার একরকম কষ্ট তুলে ধরেন। তিনি যেভাবে নিজের দেশকে পেতে চান বা সকলের জন্য যেমন বাংলাদেশ হবার কথা ছিলো তার শত অভাব দেখে অত্যন্ত কষ্টকাতর মনেই বলে ওঠেন তার ‘কারফিউ ঘেরার পূর্ণিমার রাত’ বইয়ে এভাবেঃ
…………………………………………………….
‘অভাগা দেশ’
বর্ষায় বহমান খেয়ালি স্রোত
এখন আর নেই…..
মরা নাদের ভাটিতে জাগেনা চর
তারুণ্য গড়ে না ঘর
বহেনা উষ্ণ প্রাণে শীতল বাতাস….
দোয়েল শ্যামার কুহুতানে ভরে না মন..
……………………………………………………………….
বেদনার ভারে নুয়ে পরে কবি শীতল বরফ ঝড়ের মধ্যে আরো উপমার ভেলায় ভেসে আমাদের স্বাধীন দেশের বর্তমান চিত্রপট এঁকেছেন। এতে করে তার ভেতর দেশপ্রেমের একটি অমোঘ আবেগের ছায়া দেখতে পাই যেখানে তিনি আরো একটি সুন্দর মাতৃভূমি প্রত্যাশা করেন।
সৈয়দ রনোর ছড়া কবিতা আমাকে বিষ্মিত করে। তার আকাশচুম্বি সাহসে আমিও সাহসী হয়ে ওঠতে চাই সমসাময়িক অন্যদের মতোই। সমাজের অস্থিরতা আর নষ্ট থেকে উদ্ধার করা শব্দের শ্রদ্ধাবনত সংযোজন সৈয়দ রনোর মুন্সিয়ানা। এই অমূল্য কবিতাগুলো দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একদিন সমাজ বিনির্মানের সূত্র পাবে। আমার দেখা একজন সহজ সরল মানুষের ছায়াকে আমরা যখন দেখি তখন সত্যি ভালো লাগে। অতোটা বিনয় অতোটা সরল না হলেও চলে কিন্তু সৈয়দ রনোর ভেতর একজন ভালো মানুষের ছায়া কাজ করে সর্বসময়। দিন দিন তিনি সিঁড়ি ভাঙ্গছেন-ওঠছেন বিনম ভালোবাসায় আগামী দিনের পথে এবং মননশীল সৃষ্টিশীলতায়। প্রবল আত্মপ্রত্যয় নিয়ে যেভাবে নিমগ্ন থাকছেন তাঁকে সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং জন্মদিনে তাঁর জন্য রইলো ফুলেল ভালোবাসা ও দীর্ঘায়ু কামনা।
আলোকিত প্রতিদিন/ ৩১ ডিসেম্বর– ২০২২/মওম