মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন রাজনীতি

0
368

আশিকুল কাদির:

দেশের রাজনীতি নিয়ে মানুষের শংকা দিন দিন যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন বিরোধী দলের ভেতর গ্রেফতার আতংকও বাড়ছে। অথচ এমনটা হবার কথা নয়। গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে একটি মানুষের সবাবেশ মিছিল মিটিং করবার অধিকার আমাদের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার চ্যাপ্টারের ৩৬/৩৭ ধারায়ই উল্লেখ করা আছে। মানুষ তার কথা বলবে সর্বত্র স্বাধীভাবে চলবে মিছিল মিটিংও করবে। কিন্তু যখন  রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তির ভেতর অগণতান্ত্রিক ভূত ভর করে তখনই রাষ্ট্র একনায়কতন্ত্রের রহস্যময় ঢ়োড়ায় উপবিষ্ট হয়। রাষ্ট্র পরিচালকগণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণে নানারকম বিধি নিষেধ বা প্রতিহিংসার ইচ্ছেকে পরিপূর্ণ করে। তখন মূলত রাষ্ট্রের  ভেতর শান্তির চেয়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। আরেকটি বিষয় খুব জরুরী যে যখন  রাষ্ট্রের সেবকগণ ক্ষমতায় থাকবার জন্য দুর্বিনীতভাবে প্রচেষ্টা চালান তখন জনগনের সকল স্বপ্নই ধুলিস্যাত হয় যাতে একসময় তা প্রতিবাদের ভাষায় দেশের সমগ্র অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় আন্দোলন মিছিল মিটিং এমন কী জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবার চরম আশংকাও বিকশিত হয়।

তখন রাষ্ট্রপরিচালক আইন বা নিজস্ব সমর্থকগণকে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সমস্ত বাহিনী এমনকী বিচার বিভাগকে নিজেদের আয়ত্বে রাখার জন্য সচেষ্ট হয়। যুগে যুগে সকল দেশেই প্রায় এরকমই। তবে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চায় তা ঘটে না। বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে ঘটছে। ঘটছে গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিজেদের করায়ত্ব করার মানসিকতা আর তার ফলে সরকার উল্টো পথে হেটে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বিভিন্নভাবে শাসনের পথ বেছে নিয়েছে। ফলে চলছে মিথ্যা মামলার মতো পরিস্থিতি, চলছে কারণে অকারণে গ্রেফতার। এই গ্রেফতার বিষয়টিকে বিরোধীরা যখন গায়েবী মামলার উপকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে তখন গণতন্ত্র চর্চা প্রকৃতপক্ষে মারাত্বকভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষ করে জাতীয় পর্যাযের নেতৃবৃন্দও সুযোগ নেয় এসব প্রচারের এবং জনগণকে নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করার।

গেলো কয়েকমাস যাবত বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বস্তিকর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যদিও বিরোধীদল শান্তিপূর্ণভাবে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে সেখানে সরকারী দল বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে তা ভন্ডুলের চেষ্টাও করেছে । সবাবেশের পূর্বে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করা, হোটেল রেস্তোরা বন্ধ করা, যাতায়াতে বাধা তৈরি করার সব রকম অগণতান্ত্রিক আচরণ আমরা দেখেছি। তাতে সরকার পক্ষের ভালোর বিপরিতে মন্দটাই বিভিন্ন পত্র পত্রিকা বা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এসব করে সরকার মানুষকে যখন প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেয় তখন মূলত নিজের ভোট ব্যাংকের প্রতি অবিচার করা হয়। এসব করতে গিয়ে সরকার মামলা এবং গ্রেফতার কার্যক্রম বাড়িয়েছে। জেলখানায় ভরেছে হাজার হাজার বিরোধী দলীয় কর্মী। সেখানে জাতীয় পর্যায়ের নেতারদের বাদ দেয়া হয়নি।

দেশ স্বাধীনৈর পূর্বে পাকিস্তান বা পরেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে নেতাদের ওপর সরকার এবং মানুষের মধ্যে যে শ্রদ্ধাবোধ লক্ষ্য করা যেতো এখন এসব প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতি বাস্তবায়নের কারণে রাজনীতির ওপরই মানুষের শ্রদ্ধা হ্রাস পাচ্ছে আর তখন আরেকটি গ্রুপ যা বলা যায় আমলা বা অন্য কোনো বাহিনী এসে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে হস্তগত করে। বলছিলাম গ্রেফতার নিয়ে। সরকার যেভাবে গ্রেফতার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তাতে জাতীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির সেক্রেটারী জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বয়সের ভারে নত। তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হলো কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে একই মামলায় বিএনপির অন্য নেতা জামিনে মুক্ত আছেন।

প্রশ্ন আসতে পারে কেনো মির্জা ফখরুল জেলে ? হতে পারে সরকার বিরোধী দলের এই প্রধান মূখপাত্রকে জেলে রেখে বিরোধীদলকে পরিকল্পনাহীন করা, আন্দোলনে নিরুৎসাহিত করার টোপ ফেলেছে। কিন্তু জনগণের বুঝতে বাকী নেই যে একটি মামলায় যখন অন্য কেউ জামিনে থাকে তখন মির্জা ফখরুলের এই কারাভোগের কারণকে সরকারের ভালো ইচ্ছের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করছে না। তিন তিনবার তার জামিন আবেদন নাকচ করে মূলত বিচার ব্যবস্থার ওপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ হিসেবে মানুষ ধরে নিয়েছে। কেনো জামিন হলো না। জামিনের যেসব কথা আইনে উল্লেখ করা আছে তা আমাদের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ এর ধারাটি মির্জা ফখরুল ইসলামের জন্য প্রণিধাণযোগ্য যা বিবেচনা করা যেতো। ওখানে বলা আছে জামিন অযোগ্য অপরাধের সাথে সংশিষ্ট হলেও আদালত জামিন দিতে পারেন। যদি আসামী ষোল বছরের কম হন, স্ত্রী লোক হন, পীড়িত বা অক্ষম হন তাহলে আসামীকে আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। অথচ মির্জ ফখরুল বয়স্ক এবং পীড়িতও বটে, তা সত্তেও তিন তিনবার তাঁর জামিনের আবেদন ফেরত পাঠানো হয়ছে। এতে সরকারের আইনের শাসনের প্রশ্নবিদ্ধতো বটেই মানুষের মনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটছে যাতে ভবিষ্যত নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।

একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে বিরোধীদল হলেই  জ্বালাও  পোড়াও করে, মানুষের অশান্তি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আন্দোলনের গতি বাড়াতে হবে তা যেমোন ঠিক নয়, তেমনি সরকারও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে জনগণের অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে তাও বিবেচ্য নয়।

রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী বিভাগকেই বরং সহনশীলতার পরিচয় দিতে হয়। রাষ্ট্রেকে সকলের প্রতি যখন সেবামূলক আচরণে অভ্যস্ত হবার অনুশীলন করতে দেখা যায় তখনই একটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঋদ্ধ হয়, দেশের সার্বিক কল্যাণ হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০৩জানুয়ারি -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here