অগণতান্ত্রিক মানসিকতার রোগ বালাই
আশিকুল কাদির
বাংলাদেশের বয়স হয়ে গেলো পঞ্চাশের ওপর। অনেক চড়াই উৎরাই আর ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। অনেক রক্তস্নাত স্মৃতির চিত্রপটে আঁকা এই জন্মভূমি। এই লাল সবুজ পতাকার ভেতর যে লাল চিহ্ন তার বিশ্লেষণ করলেই অনুধাবন করা যায় কেবলি রক্তের ইতিহাস ওখানে। পতাকার মধ্যিখানে যে লাল গোলাকার চিহ্ন, তার মানেই হলো হাজারো লাখো মানুষের ত্যাগ বিসর্জনের স্বাক্ষর। এই বিসর্জন যখন কেবলমাত্র নয় মাসেই অর্জন হয়েছে তখন পৃথিবীর অন্যদেশের সংগামী স্বাধীনতাকমী মানুষগণও অবাক বিষ্ময়ে অবলোকন করে বাঙ্গালির সাহস আর দেশের জন্য অকুুতোভয় প্রতিরোধের শক্তিমত্তা।
অথচ এই দেশের মানুষের মনমানসিকা বিশ্লেষণ করলে মস্তক নিচু হয়ে আসে। বিশেষ করে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা সমালোচনা যে অহেতুক পীড়াদায়ক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কী পাওয়া যায় তাদের চিন্তা ধারায়। যেখানে পাওয়া যেতে পারতো উদারতা সহনশীলতা আর ত্যাগের মহিমায় নতুন এক দেশ বিনির্মাণের সত্য ভাষণের প্রচেষ্টা। উন্নত দেশের জনগণ ও রাস্ট্রনায়কগণ যখন বাংলাদেশের উন্নয়ণ আর ডিজিটাল কর্মপদ্ধতির প্রসারের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রশংসা করেন আবার ঈর্ষাকাতর কিছু শত্রুভাবাপন্ন দেশ বা রাস্ট্রপ্রধানগণ আমাদের উন্নয়নকে বাঁকা চোখেও রাখেন। অথচ এখানেই বিষয়টি সমাপ্ত হয় না যখন দেখা যায় দেশের অভ্যন্তরেই বৃহৎ একটি জনগোষ্টির মদদপুষ্ট বিরোদী দল সরকারের কোনো ভালোকে ভালো বলে মেনে নিতে পারে না, তখন সত্যি অবাক হতে হয় যে এই বায়ান্ন বছরের পথ পরিক্রমায়ও দেশের মানুষের মানসিক বিকাশ বা উদারনৈতিকতার বৃদ্ধি ঘটলো না।
কেবলি সস্তামানের সমালোচনায় কখনো সরকার পরিবর্তন বা জনগনের মন জয় করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ আজকাল তার ভাবনার উৎকর্ষ ঘটিয়েছে পেপার ফেসবুক ইউটিউব বা চায়ের দোকানে বসে আড্ডার সুযোগে। আজকাল পাড়ায় পাড়ায় গ্রামের পথে প্রান্তরে হাটবাজারে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয় নিয়ে যুক্তি তর্কের আনন্দ বেদনার সুখ অনুভব করে সহজেই। প্রান্তিক জনগোষ্টিরাও আজকাল ভালো মন্দের তফাৎ নির্ধারণ করতে বেশিপথ যায় না। তারা উঠোন বৈঠকেই হিসেব কষে রাখে ভবিষ্যতের কিন্তু গুটিকয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমালোচনা বা অযৌক্তিক মিছিল মিটিং আলোচনার কারণে ওই সাধারণ মানুষগণ ও জিম্মি হয়ে পড়ে বা তাদের ভেতরের লুকোনো সত্য ভাষনটুকু চাপা পড়ে অকালেই।
তো বলছিলাম একটি দেশের সরকার কখনোই দেশের অমঙ্গল কাজে জড়িয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো তিরিশ লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে যেই দেশ, সেই দেশের সরকার কখনোই দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে পারে না।
তবে হ্যা একটি দেশের উন্নতি বা উৎকর্ষতার পেছনে যে বাজেট, যে বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তা হয়তো সব সময় বাস্তবে রূপ দেয়া যায় না। সেটিরও বেশ কারণ বিদ্যমান থাকে। থাকতে পারে দেশের রিজার্ভ মানির অভাব, হতে পারে দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বাৎসরিক উন্নয়ন প্রাক্কলন তৈরিতে অনভিজ্ঞতা বা টপ মোস্ট কাজের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণে ধীরগতি। ফলে অনেক উন্নয়ণই দৃশ্যমান হতে সময় চলে যায় আর এই অযাচিত অতিক্রান্ত সময়টিকেই বিরোধীদল নানা রকম ফন্দিফিকিরের গল্প বানিয়ে সরকারর বিরুদ্ধে মানুষের মনে বিষবাস্প তৈরি করে। অথচ সরকার বিরোধীগণ যদি সত্যিকারের দেশ প্রেমিক হতো, যদি মানুষের কল্যাণ চাইতো, যদি দেশের অভ্যন্তরের ‘নরমাল ক্রাইসিস’কে সকলের জন্য অনুভব করতো তাহলে তারা অমোন ঢালাও সমালোচনা করতো না। তাদের মনে অটুুটভাবেই এই বিশ^াস জন্মাতো যে সরকার অনেক উন্নতিও করেছে বটে কিন্তু আরো বেগবান বা তরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মানুষের জন্য-দেশের জন্য কাজ করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের এই ভালোকে ভালো না বলার রোগবালাই বা দৈন্যতা আজকাল প্রকট আকার ধারণ করেছে। তারা তাই পদ্মা সেতুর ভেতর কেবল দুর্নিতি খোঁজে। তারা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে মেট্রো রেলের ভেতর কোনো ভূত ঢুকে আছে কি না। মানুষের কাছে তারা এই সংবাদ পৌছাতে ব্যস্ত যে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলেও ফুটো দিয়ে জল ঢুকে যেতে পারে। অথচ একটিবার তারা মনে করে না যে এই গরীব একটি দেশের অর্থনৈতিক সীমাবব্ধতা রয়েছে, তার ভেতর সতেরো কোটি মানুষের জীবন জীবিকা আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্ঘমাইলের প্রিয় বাংলাদেশকে সামাল দেয়া সত্যি সহজ নয়। বিরোধীগণ তাই কেবল সস্তা সমালোচনার কাঁটায় বিদ্ধ করতে অগ্রসরমান পা বাড়িয়ে রাখে সরকারের উন্নয়ন পথে। বিরোধী দলের উদারতার দরোজা যেনো ‘দেখতে নারি তার চরণ বাঁকা’র মতোই উষ্মা ঈর্ষায় ভরা।
অন্যদিকে সরকারও অনেকদিন ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করলে অনেকটা স্বৈরশাসক রূপে আবির্ভূত হতে থাকে। তখন তার ভেতর অন্য মতবাদ বা পরামর্শকে তোয়াক্কা না করা, দেশের জ্ঞানী বুদ্ধিজীবীর মতকে উপেক্ষা করার কাজটি সহজে সম্পন্ন্ন করে। অতো দম্ভ তাদের ভেতর কাজ করে যে মানুষকে মানুষ মনে করতে তাচ্ছিল্যর বহিঃপ্র্রকাশ ঘটায়। সরকার যখন নিজের তখত্কে আরো পোক্ত করার মানসে এমন সব সিদ্ধান্ত নেয় তখন প্রকৃপক্ষে জনগনের রায়কেই উপেক্ষা করে। তখন রাস্ট্র চালনার যে মুল শক্তি ‘গণতন্ত্র’ তার পথ রুদ্ধ হয়। গুটিকয় মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার নিজের ভালো কাজের প্রচারে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন জনবিরোধী শাসনের গেঁড়াকলে মানুষকে শৃংখলিত করতে সচেষ্ট হয়। গণতন্ত্রের ভাষাকে যখন বৃদ্ধা্গংুল দেখানো হয় তখনই সরকার সৈ¦রশাসকে পরিণত হয়। অথচ গণতান্ত্রিক চর্চায় এমনটি হবার সুযোগ নেই । মুখে মুখে গণতন্ত্র আর বগলে শেখ ফরিদের ভাবনায় প্রহর কাটালেতো সরকার তার নিজের সর্বনাশের পথই রচনা করলো।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ জানুয়ারি -২০২৩/ আর. এইচ.কে.