আমবয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমা

0
196

আলোকিত ডেস্ক:

গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে।  ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ফজর নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়। উর্দুতে করা এই বয়ান বাংলাসহ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হয়েছে। বাদ জুমা বয়ান করবেন মাওলানা ইসমাইল গুদর, বাদ আসর মাওলানা জুবায়ের আহমদ এবং বাদ মাগরিব মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করবেন। এ বয়ানের বাংলা অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। ১২ জানুয়ারি  বৃহস্পতিবার থেকেই মুসল্লির আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ময়দান। মুসল্লিরা ময়দানে স্থান না পেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাত এবং মাঠের আশেপাশের খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে একদিন আগে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর থেকেই প্রাথমিক আমবয়ান শুরু হয়েছে। আজ ফজরের নামাজের পর বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমগণ মূল বয়ান করবেন। তাবলীগের ৬ উসুলের এ বয়ান রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে। বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করা হয়। হেদায়তি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষ হবে। ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ জানান, গত বুধবার থেকেই তাবলীগ মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দানে এসে মাঠে নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। আজ দুপুর দেড়টার দিকে ইজতেমা মাঠে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। ময়দানে আসা মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকে আম বয়ান শুরু হয়। ঈমান-আমলের এই বয়ান শুনতে ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিরা অবস্থান করছেন।

ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদীর পূর্ব পাশে নির্মিত মিম্বরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম এবং উত্তর-পশ্চিমে বিদেশি মুসল্লিদের কামরার পাশে বয়ান মঞ্চে বয়ানকারী অবস্থান করবেন। আখেরি মোনাজাত বয়ান মঞ্চ থেকে পরিচালনা করা হবে। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের ইজতেমা মাঠকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে ইজতেমা মাঠে আসি। গত দুই বছর ইজতেমা আয়োজন বন্ধ থাকায় ঢাকায় আসা হয়নি। দুই বছর ইজতেমা বন্ধ থাকায় এবারের ইজতেমায় মুসল্লিদের উপস্থিতি বেশি হতে পারে ভেবে একদিন আগেই ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছি।’

এবারের ইজতেমায় সাধারণ মুসল্লিরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আগেভাগেই অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই মূল সামিয়ানার নিচে স্থান না পেয়ে সড়কের পাশে ফুটপাতে পলিথিন টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। আরব এবং ইউরোপসহ কয়েকটি দেশের মুসল্লিরাও ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশি মেহমানদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন।

জুবায়েরের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারী দায়িত্বে থাকা জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ‘সাথিরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্রোতের মতো আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি এবার রেকর্ডসংখ্যক লোক হবে বলে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। মুসল্লিরা তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।“ তিনি আরও বলেন, ‘সভাপতিহীন বিশ্ব ইজতেমার এত বড় আয়োজন প্রতিবছরই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই সুর্নিদিষ্ট করা থাকে।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। পুরো টঙ্গী জুড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটরা বিচরণ করবে। ইজতেমা ময়দান এবং আশেপাশের এলাকালায় ছিনতাই-পকেটমারসহ অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে টহল টিমসহ থাকবে পর্যাপ্ত ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য বিভাগ পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। ওইসব ক্যাম্প থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।

গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ৩১টি বিল্ডিংয়ে (টয়লেট) একসঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি প্রস্রা-পায়খানার সম্পন্ন করতে পারবেন। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঁচটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হেসেন বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছি। আব্দুল্লাহপুর থেকে ধীরাশ্রম একটা সেক্টর, মুন্নু গেট থেকে কামারপাড়া ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ থেকে ভোগড়া চৌরাস্তা, ভোগড়া চৌরাস্তা থেকে ৩০০ ফিট রাস্তা এবং চৌরাস্তা কোনাবাড়ী হয়ে ডাইভারশন রোড পর্যন্ত।’

জিএমপি’র কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমা ময়দান এবং আপফাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পোশাকে ও  সাদা পোশাকে দুই পর্বে ১০ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। জিএমপির পক্ষ থেকে ১৪টি কন্ট্রোলরুম রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্টোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম নৌ-পুলিশ ও র‌্যা বের হেলিকপ্টার টহলে রয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ জানুয়ারি -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here