খুলনায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গায়েবি রোগী দেখিয়ে অর্থ হরিলুট

0
171
এম এস খান পলাশ:
খুলনা মিরেরডাঙ্গায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীদের সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত খাবার সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পথ্যনুযায়ী খাবার বন্টনের নিয়ম থাকলেও, হাসপাতালটিতে তালিকায় থাকা খাবার পাচ্ছে না অসুস্থ রোগীরা। এছাড়া পরিমাণেও দেওয়া হচ্ছে কম খাবার। পাশাপাশি অতিরিক্ত গায়েবি রোগীদের ভর্তি দেখিয়ে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ হরিলুট করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। আর এসব কাজে সহযোগিতা করছেন হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত স্টাফরা।
সরেজমিনে দেখা যায় হাসপাতালটিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে খাদ্যের তালিকানুযায়ী একজন ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য ১ কেজি চিড়া, ৩টি সাগর কলা, ১ ডাব, ১০০ গ্রাম চিনি ও ৫০ গ্রাম লবণ বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীর জন্য বরাদ্ধ আছে পাউরুটি ৮০০ গ্রাম, ডিম ২টি, প্যাকেট গুড়ো দুধ ৫০ গ্রাম, চিনি ৫০ গ্রাম বরাদ্দ। তবে, হাসপাতালে রোগিদের সাথে কথা বলে দৃশ্যমান হয় বিপরীত চিত্র। ডায়রিয়া রোগীর জন্য বরাদ্দ ১৭৮ টাকা। তবে, সাগর কলা, চিনি, লবণ দেওয়া হলেও ১ কেজি চিড়ার স্থলে দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র। খাদ্য তালিকায় ডাব উল্লেখ থাকলেও দেওয়া হয়না বলে জানায় রোগীরা। এদিকে টিটেনাসসহ ভাইরাস রোগে আক্রান্ত রোগীদের পাউরুটি, ডিম, প্যাকেট দুধ, চিনি বরাদ্দ থাকলেও সেখানেও পরিমাণে কম দেওয়া হয় । এছাড়াও ২০ বেডের এই হাসপাতালে গেল বছরে ৪ হাজার ১০৭ জন রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতালটিতে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি দেখানো হয়।
অভিযোগ আছে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করছে। এবিষয়ে কথা হয় রোগী আহাদ আলীর সাথে তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে দুইদিন ডায়রীয়াজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলাম। তবে কখনও ডাবের পানি, লবণ বা গুড়া দুধ চোখে দেখিনি। সকালে এক বোতল পানি ও সামান্য চিনি ও দুটি ছোট কলা পেতাম খাবারের তালিকায়। এত বড় অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা উচিত। আর এসব অসাধু ঠিকাদার ও দায়িত্বরত স্টাফদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত যারা রোগীদের খাবার চুরি করে।
এবিষয়ে ঠিকাদার জি এম মোস্তফা বলেন, আমি ঠিকাদার হলেও, সকল বিষয় দেখভাল করেন হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. আনোয়ার মীর। বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আনোয়ার মীর এর নিকট ফোনোকল করা হলে তিনি বলেন, আমি মুল ঠিকাদার না আমি এবছর কাজ পাইনি। এই কাজ আমি দেখাশুনা করি। এছাড়া এরকম অভিযোগ সব হাসপাতালে আছে আপনি খোঁজ নিতে পারেন।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান অভিযোগের বিষয়ে আংশিক স্বীকার করেন বলেন, খাদ্য তালিকা অনুযায়ী রোগীদের খাবার পরিবেশন করা হয়। তবে পরিমানমত দেওয়া হয় কিনা, এবিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত নই। এছাড়া, ঠিকাদারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মোস্তফা সাহেবকে ঠিকাদার হিসেবে জানি। তিনি যদি অন্য কাওকে নিয়োগ দেন বা না দেন, সেটা তার ব্যাপার। আমরা তাকে নোটিশ করে বিষয়টি অবগত করবো।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ থাকলেও স্টোরেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে সংক্রামন ব্যাধির কোন ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। হাসপাতালটিতে শিশু এবং মহিলাদের জন্য পৃথক কোন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা নেই। নেই পৃথক কেবিনও। পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জন্য কমন একটি ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চিকিংসা প্রদান করা হয়।
এবিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা তবে আমি বিষয়টি দেখছি দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগ সত্য প্রমানিত হলে ঠিকাদারের ও হাসপাতালে যেসব দায়িত্বরত স্টাফরা আছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব।
সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় মানুষের ডায়রিয়া, টিটেনাস, নিওমেটাল টিটেনাস, জলবসন্ত, হাম, জলাতঙ্কসহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য ১৯৬৮ সালে খুলনার মীরেরডাঙ্গায় ভৈরব নদের পাশে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা হাসপাতালটি ২০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালটির অবকাঠামোগত কোন পরিবর্তন হয়নি। অর্ধশত বছর আগের তৈরি করা ভবনেই চলছে সেবা কার্যক্রম। রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও বাড়েনি হাসপাতালের জনবল ও শয্যা। একটি কক্ষের মধ্যে নারী-পুরুষ-শিশু সকলের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে, ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি হওয়ায় চিকিৎসক ও নার্স থেকে শুরু করে কেউ এখানে সেবা দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ থাকে না বললেই চলে। কারণ এসব হাসপাতালে রোগীদের সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও সর্তকভাবে চলা ফেলা করতে হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশিতে যেমন রোগ ছড়ায়, তেমনি মশা-মাছির মাধ্যমেও অনেক রোগ ছড়ায়। আবার রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেও অনেক রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। রোগীদের নতুন করে ভিন্ন রোগে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য হাসপাতালের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকার নিয়ম থাকলেও খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটিতে নেই কোন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
আলোকিত প্রতিদিন/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here