নিজস্ব প্রতিবেদক :
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ডাক্তারি সার্টিফিকেটহীন জয় গোপাল ফার্মেসীর চিকিৎসক নির্মল কুমারের ভুল চিকিৎসায় ১৩ মাস বয়সী মায়া নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) বিকেলে ঘিওর বাজারের জয় গোপাল ফার্মেসীতে চিকিৎসা নেওয়ার পরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শিশুর মা বাদী হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মাস বয়সী শিশু মায়াকে ঠান্ডা জনিত কারণে চিকিৎসার জন্য জয় গোপাল ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। চিকিৎসক নির্মল কুমার চোখে ঘুম নিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। তার দেয়া ঔষধপত্র তার বর্ণিত নিয়মানুযায়ী শিশুটিকে খাওয়ানোর পর-পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাটি। ঐদিন রাত ১২টার দিকে গুরুতর অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মায়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভূক্তভোগী পরিবারটি খোজ নিয়ে জানতে পারেন নির্মল কুমার কোন এমবিবিএস ডাক্তার নন। তিনি এমবিবিএস ডাক্তার না হয়েও প্রতিদিন শত-শত রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন।
শিশুর মা পিংকি আক্তার স্বপ্না জানান, আমার মেয়েটি সকাল থেকে ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভূগতে ছিলেন । বিকেলে ডা. নির্মলের কাছে মেয়েকে নিয়ে গেলে এসময় তিনি এন্টিবায়োটিক লিখে দেন এবং পানি ফুটিয়ে ঔষুধ গুলিয়ে সেবন করাতে বলেন। উনার কথামত এন্টিবায়োটিক সেবনের পরেই মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ঐ রাতেই আমার মেয়েটি মারা যায়। আমি এখন ন্যায় বিচার চাই। যেন আমার মতো আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনি এমবিবিএস কোনো ডাক্তার নন। এরপরও নির্মল কুমার প্রতিদিন শত শত মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করছেন এবং তাদেরকে এন্টিবায়োটিক সহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধের নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন প্রদান করছেন। এমনকি তার ফার্মেসীতে অপরিচিত বিভিন্ন কোম্পানির ঔষদের সমাহারও রয়েছে।
এ বিষয়ে নির্মল কুমার এ প্রতিবেদককে জানান, আমার চিকিৎসায় শিশুটি মারা যাবার কথা না। আমি এমবিবিএস ডাক্তার না পল্লী চিকিৎসক। ডাক্তার না হয়েও কিভাবে প্রেসক্রিপশন করে এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, খাওয়ার নিময় লিখে দিলেতো ঔষধের নাম লিখে দিতেই হবে। আমার দিক থেকে আমি সঠিক চিকিৎসাই দিছি। এর চেছে আমি ক্লিলিয়ার কিছু বলতে পারব না। এখন মানুষ আসলে আমি কি করবো! মানুষ আসে বিধায় আমি চিকিৎসা দেই।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার হাসিব আহসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি অভিযোগের কাগজ এখনো হাতে পাইনি, তবে আমি নোট করে রাখছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
পল্লি চিকিৎসক তারা কি এন্টিবায়োটিক লিখতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পল্লি চিকিৎসক শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন, তবে কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক লিখতে পারেন না। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে তার লাইসেন্স বাতিল করা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান জানান, পল্লী চিকিৎসক শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন। আর প্রয়োজনে রেফার্ড করতে পারেন। এছাড়া এন্টিবায়োটিক লিখা বা দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই। এ ঘটনার জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ প্রশ্নের উওরে তিনি জানান, এখনো অভিযোগের কাগজ হাতে পাইনি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদুর রহমান এর অফিসিয়াল মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় তাই আমি আজকেই সিভিল সার্জন সাহেবকে মার্ক করে দায়িত্ব দিচ্ছি এবং ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও দায়িত্ব দিচ্ছি ঘটনার বিস্তারিত যাচাই করে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ প্রদান করছি।
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ ফেব্রুয়ারী -২০২৩/ এসএএইচ