ঘরছাড়া ৩৩ তরুণকে শনাক্ত করেছে র‍্যাব

0
214

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ হওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া ৫৫ তরুণের মধ্যে ৩৩ জনকে শনাক্ত করেছে র‍্যাব সদস্যরা।

র‍্যাব জানায়, শনাক্ত হওয়া ৩৩ জনের মধ্যে ১২ জনকে ইতোমধ্যে র‍্যাব আটক করেছে। বাকি ২১ জন এখনো পলাতক। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য  এবং অর্থ সংগ্রহ বিষয়ক উগ্রবাদী বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধারের পর র‍্যাব এসব তথ্য জানতে পেরেছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় আরও ৪ জনকে আটক করেছে র‍্যাব। এদের মধ্যে আটক আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে আরও একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়।

২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

dhakapost

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীরের কাছ থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ওই ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হওয়া ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের নতুন ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। এই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি আগের ভিডিওতেও ছিলেন, আর ৪ জন নতুন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নতুন চারজন হলেন শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরন ও ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ। গত বছরের ৬ জুন ডা. জহিরুল মারা গেছেন।  তিনি জানান, দুই ভিডিওতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকা মোট ৩৩ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের অভিযান চলবে। দেশে বড় কোনও নাশকতার পর নিজেদের অস্তিত্ব দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে জানান দেওয়াও এই ভিডিওর উদ্দেশ্য হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গত নভেম্বর থেকে তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিওটি ছিল। ভিডিওর কাজটি চলমান ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই র‍্যাবের অভিযান শুরু হয়।

এখন পর্যন্ত কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারা নিজেদের গ্রুপের মধ্যেই এগুলো সরবরাহ করেছে। কোনও নাশকতার পরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে সংগঠনটির আমিরই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে আটকরা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন নিজেদের স্বার্থেই নতুন জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয়, রসদ, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর বড় স্বার্থ অর্থ। এছাড়া, যে ৬০-৭০ জনের যে টিম তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এতে তাদের শক্তিও বেড়েছে। এর বাইরে অন্য কোনও স্বার্থের বিষয় রয়েছে কি-না কুকি চিনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কাউকে আটক করতে পারলে জানা যাবে।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণে প্রধান সমন্বয়কারী শামিন মাহফুজ। সংগঠনটি ২০১৭ তে কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৯-২০২০ এ নামকরণ করা হয়। প্রথমে সংগঠনের প্রধান বা আমির ছিলেন রক্সি। কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ সালে রক্সি আটকের পর ২০২২ সালে সবাই বৈঠক করে মাহমুদকে আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যখন রক্সিকে আটকের করা হয় তখন নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট তথ্য ছিল না। তাকে সে সময় অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে আটক করা হয়।

তাদের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ যে চারজনকে আটক করা হয় তাদের সমতলে আত্মগোপনের নির্দেশনা ছিল। এজন্য তারা ৪ দিন ধরে পাহাড় থেকে হেঁটে বান্দরবান শহরে আসে। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন তাদের কি শুধু আত্মগোপন নাকি অন্য কোনও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল পরবর্তীতে  নিশ্চিত হওয়া যাবে।

র‍্যাবের অব্যাহত অভিযানে এখন পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৯ জঙ্গি ও তাদের প্রশিক্ষণের সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া  ২ জনকে ডিরেডিকালাইজড করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০২ মার্চ -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here