আমি তার স্বামী, তবুও কেন বয়ফ্রেন্ড প্রয়োজন

0
299

অনলাইন ডেস্ক

আসসালামু আলাইকুম ম্যাম, আমি হাসিবুল হক। আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে এসেছি… প্লিজ একটু শুনে বলেন এখন আমি কী করব আপনি বলেন?

পারিজাত রহমান তাকিয়ে সামনে বসা ভদ্রলোকের দিকে, বয়স ৩৫ দেখতে ভালো, মাঝারি গড়নের, চেক ফুলশার্ট ইন করে পরা কালো প্যান্ট এবং পায়ে জুতা।

বিবাহিত, একটা বাচ্চা; আড়াই বছর হবে।

জ্বি অবশ্যই, বলুন…

 

আমি খুবই ভয়াবহ একটা সমস্যায় আছি গত কয়েক বছর ধরে, বলতে পারেন বিয়ের পর থেকেই…

সমাজে শুধু নারী নির্যাতনের গল্প শোনা যায়, মেয়েরা কাছের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে, সহানুভূতি পায় কিন্তু পুরুষ নির্যাতন যে ভয়াবহভাবে বেড়েছে কিন্তু ছেলেরা কাউকে বলতেও পারে না। কি যে যন্ত্রণা, বলতে গেলে ইগো সমস্যা, লজ্জা, এমনকি বন্ধুদেরও বলা যায় না, হাসাহাসি করে বলে তু্ই তোর বউকে সাইজ করতে পারিস না, বউ কি সাইজ করার জিনিস বলেন?

জ্বি, সমস্যা সবখানেই, তারপর বলুন…

আমার বাবা-মা বেশ ধার্মিক এবং রক্ষনশীল, আমরা পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। বন্ধুদের নিয়ে একদিন গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে পরিচয়, পোশাকে বেশ স্মার্ট এবং মুখে কড়া প্রসাধনী। মেয়েটা পাশের টেবিলে বসেছিল, হঠাৎ করে যাওয়ার সময় তার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায় যেটা আমাদের টেবিলের নিচে এসে পড়ে। আমি উঠিয়ে দিতে গিয়ে কথা হয় দু মিনিট, মেয়েটা অনেক থাঙ্কস দিয়ে মোবাইল নম্বর চাইলো, আমি দিলাম নাম্বার।

এরপর থেকে মাঝে মধ্যে কথা হতো ফোনে, বেশ গুছিয়ে শুদ্ধ করে কথা বলে কিছুটা ঢং করে, তখন যে বয়স শুনতে ভালো লাগতো।

সেখান থেকে শুরু, মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টে ডেট করতে যেতাম, সেও আসতো… অনেক খাবার অর্ডার করতো কিন্তু কিছুই তেমন খেত না, খুবই ফিগার সচেতন রিঙ্কি, ওজন বাড়াবে না। এভাবেই বছর ঘুরতেই আমরা দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে ফেলি। প্রথমে আমার বাবা-মা রাজি ছিলো না, তারা নামাজি মেয়ে খুঁজছিলো, আমি তখন প্রেমে অন্ধ, ভাবলাম বিয়ের পর নামাজ শিখিয়ে নেওয়া যাবে তাকে।

বিয়ের পর শুরু হলো আসল কষ্ট…

প্রথমতো দেখি রিঙ্কি তেমন সুন্দর না, কড়া প্রসাধনী দেওয়া থাকতো তাই বুঝতে পারিনি, একটু মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিলাম, এরপর তার জামাকাপড়, সে বাসায় সবার সামনে পাতলা রাতের পোশাক পরে ঘোরাঘুরি করে।

দুপুরে ঘুম থেকে উঠে ওই পোশাকেই নাস্তা করতে আসে, আমরা পুরানো ঢাকায় বড় হওয়া বড় যৌথ পরিবার। কেউ এসব ভালোভাবে নিলো না। আমি রিঙ্কিকে বুঝিয়ে বললাম, সে উল্টো বুঝে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেলো। আমরা নাকি খ্যাত, ফ্যাশন বুঝি না, সে খুবই টাইট ফিটিংস জামাকাপড় পরে।

এভাবেই একটা বছর কেটে গেলো, আমার আগে থেকে আবেদন করা অস্ট্রেলিয়ার ভিসা হয়ে গিয়েছিলো। আমি রিঙ্কিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে আসি। তখন কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম মনে হয়েছিল, অন্তত বাবা-মা মুখ কালো আর আত্মীয়দের কটূ কথা শুনতে হবে না।

কিন্তু এখানে এসে শুরু হলো আসল সমস্যা, সে এই দেশের মেয়েদের মতো ড্রেস পরা শুরু করলো, এত ছোট খাটো ড্রেস, পুরো শরীরের সব বোঝা যায়, এমন কি শাড়ি পরলেও এমনভাবে পরে তা পরা না পরা সমান, এর চেয়ে সাঁতারের পোশাক পরা মেয়েদের বেশি ভদ্র দেখায়, বাকিটা বুঝে নিন, খুবই আবেদনময়ী জামাকাপড় স্মার্টনেসের নামে… তাকানো যায় না, কিছু বললেই ঝগড়া।

সে মডেল হতে চায়, ফটোগ্রাফার দিয়ে ইউনিভার্সাটিতে কিছু ছবি তুলেছিল, এখানকার বুটিক শপগুলোতে গিয়ে নিজের ছবি দিয়ে এসে আমাকে একদিন বললো সে মডেল হবে। খুবই বিরক্ত লাগলো, তোমার কেন এত কিছু থাকতে মডেল হতে হবে? হাজারটা মানুষ তাকিয়ে থাকবে, এটা কি খুব ভালো কিছু? শরীর দেখিয়েছো বাহবা কুঁড়ানো?

রিঙ্কি এমন রেগে গেলো, সামনে থাকা ফুলদানি ছুড়ে ফেলে ভাঙলো, আরও অনেক কিছু ভেঙে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

দেখুন আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে, সেই বাড়ির বউয়ের এমন পোশাক, আর মডেল এসব কিছুতেই যায় না। বুঝলাম, কিন্তু এগুলো আপনার তাকে বিয়ের আগেই বলা দরকার ছিলো, বা বিয়ের পরপরেই।

আর একদিন দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি বাসায় নাই, ফোন করলে বললো ডেটিংয়ে গেছে, জিমে যায় শরীর ফিট রাখতে, সেখানে নাকি এক ছেলের সঙ্গে পরিচয়, তাকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ড্রাইভে দূরের এক বিচে ঘুরতে গেছে।

বললাম আমাকে তো বলোনি?

এটা শুনে এত সিনক্রিয়েট করলো, বলে আমি স্বামী হয়ে কি তার মাথা কিনে নিয়েছি, সব কৈফিয়ত দিতে হবে?
তার নাকি রিলাক্স করতে বয়ফ্রেন্ড প্রয়োজন, আমি বলে বেশি ব্যস্ত থাকি, সময় দেই না তেমন।
কেমন লাগে বলেন?

আমি তো চাকরি করি, উপার্জন করি সংসারের জন্যই, বাড়ি করার জন্য জায়গা বুকিং দিয়েছি, বাসায় আসার পরে আবারো ঝগড়া, বলে আমি যদি তার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করি তাহলে সে বিষ খেয়ে সুসাইড করবে, আর চিরকুট লিখে যাবে মৃত্যুর জন্য নাকি আমি দায়ী! এগুলোকে কি নারী স্বাধীনতা বলে?

আমি তার স্বামী, সে কেন আমাকে বলবে না? সে বিবাহিত, তার কেন বয়ফ্রেন্ড থাকবে?

ওহো, উনি তো বিপদজনক, আপনি আপনার জিপিকে এগুলো জানিয়ে রেখেছেন তো?

জ্বি বলেছি, কিন্তু রিঙ্কি বদলায় না, ইদানিং তার অনেক বয়ফ্রেন্ড, সবার সাথেই ঘুরতে চায়, সেই সময় আমার মনে হলো বাচ্চা নেই, তাহলে মনে হয় বদলাবে, এত ভুল চিন্তা ছিলো আমার, একটুও বদলায় কি, উল্টা অত্যাচার আরো বেড়েছে, বাচ্চার বয়স ছয়মাস হওয়ার পর থেকেই সে আবার আগের মতোই।

এই ছয়মাস তার মা এসেছিলো, ওদের ফ্যামিলি কিন্তু ঢাকায় সেটেল্ড ও না, একটা দুইরুমের বাসায় ভাড়া থাকে, দুই বোন দুই ভাই, বাবা-মা মিলে, অর্থনৈতিক অবস্থা ও তেমন ভালো না, আমি এগুলো নিয়ে কখনোই কিছু বলিনি, ভেবেছিলাম রিঙ্কির মা এসে রিঙ্কিকে শাসন করবে, কিন্তু কিছুই বলে না, উল্টা রিঙ্কি যা বলে তাই শোনে, আমাকেই এটা সেটা অর্ডার করে।

এখন বাবা-মাকে বলতে গেলেও সমস্যা, বলে আগেই তো মানা করেছিলাম, দুনিয়ার সবকিছু করা যাবে, কিন্তু ডিভোর্স দেওয়া যাবে না… বাচ্চা আছে একটা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আমি কি করবো ম্যাম? ডিভোর্স দিলে রিঙ্কি কি করবে সেটাও বুঝতে পারি না।

আপনি কি করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত, তবে আপনার যা বয়স তাতে আপনার সামনে আরও ৩০-৩৫ বছর আছে, একটা ভুল বিয়ে আর বাচ্চার কথা ভেবে আপনি কি সারাজীবন এই যন্ত্রণায় থাকবেন না বেরিয়ে আসবেন, সেটা ভালোভাবে চিন্তা করেন। কারণ সংসার আপনি করেন, আপনার বাবা মা না… আর যেই সংসারে বারোমাস অশান্তি লেগে থাকে সেই সংসারে বাচ্চারা আরো অসহায় ও মনোকষ্টে বড় হয় যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ থেকে আসা পরিবারগুলো এই সত্যটা মানতে চায় না, তারা বাচ্চার দোহাই দিয়ে একটা অমানসিক কষ্টের জীবন বেছে নেয়, এতে করে নিজের এবং বাচ্চার দুজনেরই মারাত্মক ক্ষতি করে। শিশুরা খুব দ্রুত যেকোনো পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে যদি তারা সেখানে শান্তি পায়।

আপনার ওয়াইফ ‘‘Dissociative Identity Disorder’’ এ ভুগছেন, তার জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন, নয়তো আরো বেপোয়ারা হয়ে যাবে।

জ্বি, কিন্তু আমার মনে হয় আমি গভীর সমুদ্রে পড়ে গেছি, সাঁতরে পার পাচ্ছি না…

আপনার অবস্থা শোচনীয়, কারণ আপনি তো বিবাহিত জীবনে সংসারী মেয়ে চেয়েছিলেন, কিন্তু মোহে পড়ে বিয়ে করে এখন কষ্ট পাচ্ছেন। এজন্য বিয়ের সময় নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য আছে তেমন পরিবার থেকে ছেলে বা মেয়ে আনতে হয়, সেখানে বেশি গড়মিল হলেই এমন সমস্যা দেখা দেয়।

আমি কি তাহলে সেপারেশনের ফাইল লজ করবো?

সেটা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। চিন্তাভাবনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেন।

আচ্ছা, আজ তাহলে উঠি, প্রয়োজন হলে আর একদিন আসবো।

অবশ্যই, ভালো থাকবেন, সৃষ্টিকর্তা আপনার সহায় হোন।

হাসিবুল হক চিন্তিত মুখে উঠে চলে গেলেন তিনি।

 

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here