আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

0
177

আলোকিত ডেস্ক:

পরাধীনতার শেকলে বন্দি বাঙালি জাতি তখন স্বাধীনতার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল। শুধু প্রয়োজন একটি ঘোষণার, একটি আহ্বানের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ডাক এলো মুক্তি সংগ্রামের। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। পুরো বাঙালি জাতি সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো অবগাহন করেছিল রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধুর অমর কবিতা। বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম‘।

আজ মঙ্গলবার, সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা আমাদের ‘স্বাধীনতা’ নামের এক অমরবাণী শোনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। তিনি বীর বাঙালিদের অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উচ্চরন  করেন তাঁর ভাষণের শেষ দুটি শব্দে- ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে। রাজনীতির কালজয়ী কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন, ক্ষমতাকে কী করে নিয়ন্ত্রিতভাবে সকলের কল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তাও বুঝিয়ে দেন, শিখিয়ে দেন আত্মরক্ষামূলক কিংবা প্রতিরোধক সমরনীতি, যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি। সেই মর্মস্পর্শী বজ্রনিনাদ ৭ কোটি বাঙালির হৃদয়কে বিদ্যুৎগতিতে আবিষ্ট করেছিল। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০২১ সাল থেকে সরকারের ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি স্বাধীনতা পেলেও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও।তবে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে টানা বর্তমান পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কারণে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস সামনে এসেছে। শতকোটি বার প্রচারিত হচ্ছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজের মর্যাদা দিয়ে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল বাঙালির নয়, বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

কর্মসূচি:

এবারের ৭ মার্চের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের  প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০৭ মার্চ -২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here