চেয়ারম্যান হামিদ জনপ্রতিনিধি থেকে সন্ত্রাসী

0
577
 মহিবুল্লাহ চৌধুরীঃ
পদ্মাবতী নদীর ঘাট দখল করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন, সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমি দখল, নদী কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায়সহ এমন কোন কাজ নেই যা হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ করেন না মর্মে তাঁর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে । কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে চাইলে প্রাথমিক ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় স্থানীয় রনজু মেম্বারের মাধ্যমে। মামলার বাদী হয় রনজু মেম্বারের কাছের লোক,সাক্ষী থাকেন রনজু মেম্বার নিজে, থানা পুলিশ সব দেখেন হামিদ চেয়ারম্যান। প্রতিবাদকারী’কে এতে থামানো না গেলে এলাকা ছাড়া হতে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অপহরণ গুম,খুনের শিকার হতে হয় প্রতিবাদকারীদের বলে জানান এলাকার ভুক্তভোগী । গত ৫ জানুয়ারি ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করার পূর্বে স্থানীয় চিহ্নিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী’র সাথে সমন্বয় করে মাঠে নেমে নির্বাচনে জয়ী হন হামিদ চেয়ারম্যান । ইউপি নির্বাচনে সরকার দলীয় টিকেট প্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান’কে মাঠে পরাজিত করতে হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এলাকা ছাড়া করেন । নির্বাচন পরবর্তী এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না অনেক ত্যাগী নেতারা। তাদের মধ্যে অন্যতম রাজপথ কাঁপানো ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি জালাল শেখ, পিতা আবদুল হাই হাঁটুরিয়া দক্ষিণ পাড়াস্থ গ্রামের বাসিন্দা জান বাঁচাতে ঢাকায় গিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করে দিনাতিপাত করছেন বলে জানা যায় । রহিম অরফে রহমত, পিতা মৃত কুরবান শেখ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আছেন জালাল শেখের মত জীবন বাঁচাতে। এমন বহু ত্যাগী নেতাদের করুন অবস্থা হলেও থানা পুলিশের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর নদী ও চরাঅঞ্চলের কুখ্যাত দস্যু বাহিনী’কে সাথে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গড়ে তুলেছেন নতুন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী যা পরিচালিত হয় তার একক নেতৃত্বে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের লিখিত অভিযোগে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগ আবদুল হামিদ’কে ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। তবে সরকার দলীয় পদ পদবী না থাকলেও প্রায়ই একশত জনের মত অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে প্রকাশ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চরের জমি দখল,চাঁদা আদায় সহ নানা অপকর্মে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায় । এদের প্রত্যেক সদস্যের রয়েছে ১০/১৫/২০/২৫ টা পর্যন্ত মামলা, এর মধ্যে হত্যা মামলা,চাঁদাবাজি মামলা,অবৈধ জমি দখলের মামলা, ধর্ষণ মামলা,অপহরণ মামলাও রয়েছে । তবে আলাদীনের যাদুর সাহায্যে কেউ কখনো গ্রেফতার বা হাজির হতে হয়নি আদালতে। ৯৫ বছর বয়সী স্থানীয় সাবেক মেম্বারের ভাষ্য মতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস আলী মকুল’কে দিন দুপুরে প্রকাশ্য গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করার পরও থানা পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সাধারণ একটা মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছিল কয়েকজন’কে কোন প্রকার আদালতের শরণাপন্ন না হয়ে মামলায় বেকুসুল খালাস পেয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। হত্যা মামলার আসামি বেকুসুর খালাস পেয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল বাহিনী যার নেতৃত্বে রয়েছে স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ। এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। চেযারম্যানের নেতৃত্বে পুরো বাহিনীর হাতে রয়েছে ১৫টি অবৈধ বালু উত্তোলনের পয়েন্ট যার মাসিক মাসোহারা পায় পুলিশ প্রশাসন। হাঁটুরিয়া নাকালিয়া দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, একজন চেয়ারম্যান মানে জনগণের সেবক, যেখানে বসে সমাধান করতে হবে প্রতিনিধিদের সমস্যা গুলো অথচ তিনি নিজেই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন । বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে, তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কেউ এখন এলাকায় নেই। এভাবে চলতে থাকলে সন্ত্রাসীদের জন্য নেতৃত্ব শুন্য হয়ে যাবে বৃহত্তর আওয়ামী লীগের হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন কমিটি। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু জনসভায় প্রকাশ্য ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ’কে ভালো না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। পরবর্তী সময় থেকে তিনি আড়াল হয়ে বাহিনীর লোকজন, মেম্বার, পুলিশ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান সবকিছুর মূল নিয়ন্ত্রক থানার ওসি সাহেব । চেয়ারম্যানের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করতে গেলে সরাসরি বলে দেয় মারামারি হয়েছে, হাত পা ভেঙেছে সমস্যা কি হাসপাতালে যাও মরলে আসিও তখন মামলা নিবো। এলাবাসীর অভিযোগ আমরা নিরুপায় কোথায় যাবো? এসপির সাথে কথা বলে সার্কেল অফিসারের সাথে দেখা করে ওসির সাথে যোগাযোগ করলেও মামলা নেয়নি বেড়া থানা।সকল তথ্য সংগ্রহের পর হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মুঠো ফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি সবকিছু মিথ্যা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন, এর বাইরে কোন বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। বেড়া থানার ওসি আসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি গত ২০/০৩/২২ তারিখে বদলী হয়ে গেছি এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই বলে মন্তব্য করেন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ মার্চ-২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here