বাঘের রাজ্যে মধু আহরণ শুরু

0
195

প্রতিনিধি,কয়রা: 

বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র উপকূলীয় লবনাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন।  সুন্দরবনের মধুর সুনাম দেশজুড়ে। খাঁটি মধুর ঘ্রাণ এবং স্বাদ অতুলনীয়। মধুপ্রেমীদের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কদর অন্যরকম। জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের মধুর অবদান ব্যাপক। চলতি মাসের শুরু হচ্ছে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুম। তবে বৃষ্টির সঙ্গে সুন্দরবনের মধুর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান একাধিক মৌয়াল। যত বৃষ্টি হয় মৌচাকে তত বেশি মধু পাওয়া যায় বলে জানান তারা।
সুন্দরবন সংলগ্ন গোবরা ইউনিয়নের মৌয়াল আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি ছোট্ট  বেলা থেকে সুন্দরবনের চাক ভাঙি। যে বছর যত বৃষ্টি হয় সে বছর চাকে তত মধু পাওয়া যায়। এবছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। পাস নিয়ে বনে গেলে ঠিক মতো মধু পাওয়া যাবে কিনা জানি না। মধু আহরণ করতে গেলে ধোঁয়া করতে হয়, ধুনু পোড়াতে হয়, আর এসবের গন্ধে বাঘ চলে আসে। সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি বাঘের আক্রমণের শিকার হয় মৌয়ালরা।
তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গরান, খলিষা, কেওড়া এবং বাইন গাছের ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। খলিষা ফুলের মধু সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। দেখতে সাদা, খেতে সুস্বাদু।’
বন কর্মকর্তারা জানান,মৌয়ালরা অতি কষ্ট করে সুন্দরবন হতে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। ২০২২ সালে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫০ কুইন্টাল।
তিনি জানান, যদিও ২০২২ সালে   মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫০ কুইন্টাল, পক্ষান্তরে মধু আহরিত হয়েছে দুই হাজার ৬ কুইন্টাল। অপরদিকে মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৫ কুইন্টাল। মোম আহরিত হয়েছে ৬০২ কুইন্টাল। রাজস্ব উপার্জিত হয় ১৫ লাখ চার হাজার ৮৭৫ টাকা। পাঁচ লক্ষাধিক টাকার অধিক রাজস্ব আয় হয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে চার হাজারের বেশি পেশাদার মৌয়াল সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করেন। সুন্দরবনে মৌচাক থেকে পর্যাপ্ত মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারণ উপযুক্ত সময় ছাড়া মৌচাক থেকে পর্যাপ্ত মধু পাওয়া যায় না। তাছাড়া মধু আহরণের সময় যাতে মৌমাছি আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর রাখতে হয়।

সুন্দরবনের চারিদিকে নোনাপানি সে কারণে মৌমাছিদের মিষ্টি পানি দরকার হয়। সেই পানি তারা বৃষ্টি থেকে পেয়ে থাকে। কিন্তু এবছর এখনও বৃষ্টি হয়নি সেজন্য কী হবে বলা যাচ্ছে না। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের ফলে ইদানিং সুন্দরবনে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে মধু উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। সরকারিভাবে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিদেশে রফতানির কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।
সুন্দরবনের মধু নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ এনভায়ারমেন্ট ডেভলপমেন্ট সোসাইটি। এর পরিচালক মাসুদুর রহমান মুকুল বলেন, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত সুন্দরবনের মধু উৎকৃষ্ট মানের। কিন্তু উৎপাদিত মধু সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা গেলে বিদেশে অধিক মূল্যে বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তিনি নিউজিল্যান্ডে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ভানুকা মধুর কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মধু। এ মধু প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠলে অধিক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০২ এপ্রিল-২০২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here